ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিচলিত সিঙ্গুর-নন্দী গ্রাম

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪
বিচলিত সিঙ্গুর-নন্দী গ্রাম ভোটের প্রচারনায় বাপ্পী লাহিড়ী

বাপ্পী লাহিড়ীর সব সুরে-গানে বিনোদনের চূড়ান্ত। তাঁর পরিষ্কার মেসেজ, খাওদাও, আরাম করো।

সিঙ্গুরে পা দিয়ে যেসব সুর মাথায়। ১৭ কিলোমিটার আবাদী জমি মরুভূমি। সবুজ ফসল মাথা তোলে না, পেকে সোনালিও হয় না। নরম মাটির বুকে সিমেন্টের কংক্রিট। বোশেখের রোদে তেতে আগুন। পা রাখা দায়। টাটার ‘ন্যানো’ গাড়ির কারখানা হওয়ার কথা ছিল। উৎপাদন শুরুর মুখে তৃণমূলের প্রতিবাদ আন্দোলনে সব লণ্ডভণ্ড। টাটা পাততাড়ি গুটিয়ে গুজরাটের সানন্দ-এ।   সেখানেই ন্যানোর জন্ম। রাশি রাশি ন্যানো ছড়াচ্ছে দেশে-বিদেশে; দাম নামমাত্র। মোটর সাইকেলের টাকায় ন্যানো কেনা যায়। এক ফোঁটা তেলে অনেকটা দৌড়। হাজার হাজার গুজরাটির চাকরি। অনুসারী শিল্পে লক্ষ লক্ষ লোকের বাণিজ্যিক লাভ। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পোয়াবারো। প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় রাস্তায় পালে হাওয়া। গুজরাটে লোকসভা আসন ২৬। ন্যানো কারখানার দৌলতে তার সবকটাই পকেটে পোরার সুযোগ।

শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রে পরে সিঙ্গুর ২০০৯-এ জিতেছিলেন তৃণমূল প্রাণী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জেতার কারণ ছিল কৃষি জমি বাঁচাও আন্দোলন। মা, মাটি, মানুষ শ্লোগানটা কাজে লেগেছিল। সরকার জমি কেড়ে নিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা লোকের মনে গেঁথে দিতে পেরেছিল তৃণমূল। সিপিএমকে হারিয়ে তৃণমূলই জিতেছিল। তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সিঙ্গুরবাসীকে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেকথা রাখতে পারেননি মমতা। টাটা জমি ছাড়তে রাজি হয়নি। জমি নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। তার নিষ্পত্তি কবে হবে কেউ জানে না। জমি গেল, কারখানাও হল না। হতাশ সিঙ্গুর। ভোটে তার প্রভাব পড়ার শঙ্কা। তৃণমূলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের চেয়ে এগিয়ে সরব বিজেপি প্রার্থী বাপ্পী লাহিড়ী। তাঁর সাফ কথা, মনোরঞ্জন করতে নয়, সিঙ্গুর এসেছি মানুষের পাশে দাঁড়াতে। শিল্পী বলে, অন্যায় করব কেন? মমতা, সিঙ্গুরকে ঠকিয়ে ক্ষমতায় গেছেন। এই ধাপ্পা মানুষ বরদাস্ত করবে না।

মেদিনীপুরের তৃণমূল লোকসভা কেন্দ্রের ঐতিহাসিক অঞ্চল নন্দীগ্রাম। ২০০৭ -এ সিঙ্গুরের মতো এখানেও জমি দখল নিয়ে ঝড় বয়েছে। পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়েছে। বামফ্রন্ট নন্দীগ্রামে ক্যামিক্যাল হাব করতে চেয়েছিল। প্রতিবাদের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। সেইসঙ্গে নন্দীগ্রামের নিয়ন্ত্রণ হারায়। এলাকার দখল নেয় তৃণমূল। হাজার হাজার সিপিএম কর্মী ঘর ছাড়া হয়। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী বিপুল ভোটে জয়ী হন। এবারেও তিনি প্রার্থী। তাছাড়া সিপিএমের লোকেরা এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। শুভেন্দুর প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী শেখ ইব্রাহিম আলী প্রাণপণ লড়ছেন দলের লোকেদের দলে ফেরাতে। পারছেন না। শুভেন্দুর পাঁচিলে ধাক্কা খেয়ে ফিরছে তাঁর সব প্রয়াস।

trinomul_01নন্দীগ্রাম থেকে পালিয়ে এসে কলকাতায় কাজ নিয়েছে বহু সিপিএম কর্মী। মেটিয়া বুরুজে দর্জির কাজ করছে অনেকেই। মাসে দুবার ঘরে ফেরে গোপনে। মা-বাবা, স্ত্রী-ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করে, তাদের হাতে সংসারের টাকা তুলে দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসে। ইব্রাহিমের ইচ্ছে, ভোটের দিন তারা যেভাবেই হোক নন্দীগ্রামে গিয়ে ভোটটা দিয়ে আসবে।

সত্যিই কি সেটা সম্ভব? শুভেন্দু অধিকারীর বেড়া টপকে, পোলিং বুথে গিয়ে, ইভিএমে সিপিএম প্রতীকের পাশের বোতামটা টিপতে পারবে! এখনও সিপিএম জানে না, সব পোলিং বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে কীনা। এক সময় সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ মাতব্বরি করেছেন মেদিনীপুরে। মানি আর মাসল পাওয়ারে দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল তাঁর। গতবছর লোকসভা নির্বাচনে হারার পর তিনি অসহায়। দ্বিতীয় আঘাতটা পেয়েছেন দলের কাছ থেকে। তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আর সিপিএমের কেউ নন।

এখন মেদিনীপুর চালায় তৃণমূলের দুই নেতা শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী। তাঁদের প্রতাপ এতটাই, তারা মমতার পরোয়া করেন না। নির্বাচনী প্রচারে মমতা সেখানে যান না। তিনি জানেন, অধিকারীরাই অধিকার করে রাখবেন তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে বাকি সব কেন্দ্রে প্রার্থীরা যখন তাকিয়ে থাকেন মমতার দিকে, তৃণমূল ব্যতিক্রম।

বামফ্রন্টের ড্রিম প্রোজেক্ট সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে ধ্বংস করে তৃণমূলের উত্থান। যদি এই দুই প্রকল্পে বামেরা সফল হতো,তবে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেত। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতি হয়তো ফিরত। তৃণমূল অনেক পিছিয়ে পড়তো। মমতা মরিয়া হয়ে প্রোজেক্ট দুটি আটকেছেন। আটকানো এক, ধরে রাখা আর এক। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই মমতার ইমেজ সারদা কেলেঙ্কারির দাগ। বিরোধী নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, সারদার সব নথি প্রকাশ পেলে তৃণমূল দলটাই উঠে যাবে। মমতা মরিয়া হয়ে তদন্তে পানি ঢালতে চাইছেন। একা পেরে উঠছেন না।

 

মরুতে মরীচিকা

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।