কলকাতা: ভারতে চলতি লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোট বুধবার। আর এ ভোট প্রচারের শেষ দিন ছিল সোমবার।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ভোট শান্তিতে হওয়ার পর বুধবার তৃতীয় দফার ভোট সবটাই এ রাজ্যে দক্ষিণবঙ্গের কেন্দ্র৷ তৃণমূলের প্রভাবও রয়েছে৷ পাশাপাশি বামফ্রন্টের নিজেদের দখলে থাকা কেন্দ্র হাতছাড়া হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ নজর প্রতিকেন্দ্রেই৷ টানটান উত্তেজনায় ভোট হবে বীরভূম, বর্ধমান, হাওড়া ও হুগলি জেলার নয় কেন্দ্রে৷ বীরভূমের দুই কেন্দ্র হল, বীরভূম ও বোলপুর৷
বর্ধমানের তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে আসানসোল বাদে ভোট হবে বর্ধমান-দুর্গাপুর ও বর্ধমান-পূর্বে৷ হুগলি জেলায় তিনটি কেন্দ্র হল, আরামবাগ, শ্রীরামপুর ও হুগলি৷
ভোটের আগ পর্যন্ত প্রচারে শাসকদল তৃণমূলকে সমানে টক্কর দিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম৷ কোনো কেন্দ্রের কিছু বুথে অবশ্য চতুর্মুখী লড়াই হবে৷
এই ন'টি কেন্দ্রের মধ্যে বিশেষ করে নজরে থাকছে তিন কেন্দ্র৷ বীরভূম, শ্রীরামপুর ও হাওড়া৷ এই তিন কেন্দ্রেই তারকা প্রার্থীরা রয়েছেন৷ বীরভূমে তৃণমূলের শতাব্দী রায়ের পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও ফিল্ম জগতের লোক৷
শ্রীরামপুরে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বিজেপির হেভিওয়েট তারকা প্রার্থী বাপি লাহিড়ী৷ তাঁর সমর্থনে প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোড়ন ফেলেছেন৷
হাওড়া কেন্দ্রে রয়েছেন বিজেপির অভিনেতা প্রার্থী জর্জ বেকার৷ তাঁর লড়াই তৃণমূলের ফুটবল তারকা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিপিএমের শ্রীদীপ ভট্টাচার্যর সঙ্গে৷ তিনটি কেন্দ্রেই সিপিএমের তুলনায় বিজেপি প্রার্থী চমক দিয়েছেন৷ বীরভূমে আকাশপথে কপ্টার নজরদারি চলবে৷ আগেই আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা টহল দিয়েছেন৷
এতোকাল যেসব ভক্ত পর্দায নিজেদের প্রিয় তারকাকে দেখে সুখ মিটিয়েছেন। এবার সেই ভক্তরা হাতের নাগালের মধ্যে পেয়েছেন তাদের তারকাকুলকে। এক্ষেত্রে রাজ্যের উত্তরবঙ্গের জেলা বর্ধমানের মানুষ ছিলেন ভাগ্যবান।
বর্ধমান জেলায় গিয়েছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী, দেবশ্রী, দেব, যীশু সেনগুপ্ত, শুভশ্রী, জুন মালিয়া প্রমুখ। তারকাদের কাছে যাওয়ার জন্য সবকটি সভাতেই দেখা গিয়েছে ব্যাপক হুড়োহুড়ি। বর্ধমান কালনা মহকুমার নানা গ্রামে জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের আশা, তারকা খচিত সভাগুলিতে জনতার স্বতস্ফূর্ততা ছিল চোখে পড়ার মত। প্রত্যেকটি সভায় প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। ইভিএমে তার প্রভাব পড়বেই। নতুন ভোটারদের বেশির ভাগই ভোটই আসবে আমাদের ঝুলিতে।
যদিও বিরোধীদের দাবি, তারকাদের দেখতে স্বাভাবিক কৌতূহলেই কিছু মানুষ গিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট দেওয়ার সময়ে মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধেই রায় দেবেন।
বাকুড়া জেলার রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকে জন্ম বাসুদেববাবুর। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব। তার জন্ম, বেড়ে ওঠা, ছাত্রজীবন। এমনকী শিক্ষকতার প্রথম দিক পর্যন্ত অনেকটা দিন বেড়োতেই কেটেছে বাঁকুড়ার ন’বারের এই সংসদ সদস্যের।
সেই গ্রামেই বাসুবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী শ্রীমতী দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেন। সোমবার ভোট প্রচারে গিয়ে আক্রমণ শানালেন, গ্রামের উন্নয়ন হয়নি দাবি করে। বাসুদেবাবুর পাল্টা জবাব, “গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে উনি কী জানেন?”
মঙ্গলবার হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হল এক ভোট কর্মীর। অবশ্য তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি থেকে নেমে মঙ্গলবার হয়েছে ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোটের কাজে এসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ওই ভোট কর্মীর। ঘটনা বীরভূমের মুরারইয়ে। মৃতের নাম নান্টু মণ্ডল(৫৫)। তাঁর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কলেজপাড়ায়।
তিনি উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার রায়গঞ্জ ডিপোর কর্মী ছিলেন। আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে তিনি থাকছিলেন মুরারই থানার কনকপুর হাইস্কুলে। এ দিন সকালে অসুস্থ বোধ করায় জওয়ানরা তাঁকে মুরারই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪