আমেথি থেকে: ভারতের আর সব নির্বাচনী এলাকার তুলনায় উত্তর প্রদেশের আমেথি আসনটিকে ছোটই বলা চলে। এ আসনের লোকসংখ্যা মাত্র ১২ লাখের কাছাকাছি।
আর যে গান্ধী পরিবারের কারণে আমেথির নাম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, সে পরিবারকে সমর্থন দেওয়ার রেওয়াজেই এবার লোকসভা নির্বাচনে এ আসনে এগিয়ে আছেন সোনিয়াপুত্র রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুলকে আমেথিবাসী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীও ধরে নিয়েছে।
দু’দিন ধরে আমেথি ঘুরে এমনই আভাষ মিললো। বুধবার এ আসনে ভোট। কিন্তু কোথাও নির্বাচনী পোস্টারের আধিক্য নেই। মাঝেমধ্যে দেওয়াল লিখন চোখে পড়লেও তা খুব বেশি নয়। তবুও লোকালয় জুড়ে কেমন রাহুল রাহুল রব। ফুডপার্ক, কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ, বিদ্যুত ইত্যাদি খাতে নজিরবিহীন উন্নয়নও এগিয়ে রাখছে রাহুলকেই।
আমেথি শহরে দাঁড়িয়ে প্রশান্ত ত্রিপাঠী নামে এক তরুণ বললেন, অন্য দেশ থেকে আপনি কেন ছুটে এসেছেন এখানে। রাহুল ভাইয়া এ আসনের প্রার্থী এজন্যই তো! এই গান্ধী পরিবারই আমেথিকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে। তবে আমরা কিভাবে তাকে ভুলে যাই, বলুন।
প্রশান্তকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম। আমেথির মুন্সিগঞ্জ এলাকা। সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালের পাশের বাংলোয় কংগ্রেস অফিসের পাশে দাঁড়িয়ে নরেশ কুমার নামে বিহারের এক শিক্ষক বললেন, অবশ্যই রাহুল গান্ধীই আবার জিতবেন। অন্য কেউ এ আসনে টিকতেই পারবে না।
নির্বাচনী প্রচার শেষে রাহুল, প্রিয়াংকা দু’জনেই দিল্লি চলে গেলেও অফিসটিতে নেতা-কর্মীদের আনাগোনা কমেনি।
কংগ্রেসের আমেথি জেলা সভাপতি যোগেন্দ্র মিশ্র বলেন, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দুজনেই দিল্লির ভোটার। এখানকার নয়। নির্বাচনী প্রচার শেষে উভয়েই সোমবার আমেথি ছাড়লেও তারা জানেন, আমেথিবাসী রাহুলজিকেই জয়ী করবেন। আমেথিবাসীর ভালবাসাকে তারা ভালভাবেই চেনেন।
রাহুলের জন্য আমেথিবাসীর এমন অবারিত ভালোবাসা সত্ত্বেও এবারের ভোট বেশ কঠিনই হয়ে উঠেছে রাহুলের জন্য।
এবারই প্রথম গান্ধী পরিবারের বিপরীতে এ আসনে শক্ত প্রতিপক্ষ লড়ছে। বিজেপির হয়ে রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ‘সাস ভি কাহি বহুথি’ সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি। তবে স্মৃতির বহু আগে থেকেই এ আসনে লড়ার ঘোষণা দিয়ে জনসংযোগ শুরু করেন আম আদমির প্রার্থী কবি কুমার বিশ্বাস। নিজ এলাকা গজিয়াবাদ থেকে মাস চারেক আগে এখানে এসে ঘাঁটি গেঁড়েছেন তিনি। ঘরে ঘরে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন ভোটের আবদার।
জনগণ তিন প্রার্থীর আব্দার নিয়েই ক্ষণ গুনছে ভোট দেওয়ার। টিলোয়, জগদীশপুর, গৌরিগঞ্জ, সালন ও আমেথি নিয়ে এ আসনটির ভোট হবে বুধবার। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আমেথি ঘুরে দেখা গেলো, বিভিন্ন স্কুলে কেন্দ্র তৈরির কাজ শেষের পথে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তাবাহিনীও নিয়োজিত।
গৌরিগঞ্জ এলাকায় বিজেপি অফিসে গিয়ে জানা যায়, এখানকার প্রতিটি নেতা-কর্মী স্মৃতি ইরানির জয় নিয়ে আশাবাদী। একই আশা ব্যক্ত করেন স্টেশন রোডে আদমি পার্টি অফিসের নেতা-কর্মীরাও। খানিকটা দূরে আম আদমির প্রার্থী কুমার বিশ্বাসের বাড়িতে গেলে তিনিও বাংলানিউজকে জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমরা দেশে থেকে দুর্নীতি বিলোপ করার মন্ত্রে মাঠে নেমেছি। জয় আমাদের হবেই।
আমেথিতে আমআদমি পার্টি অফিসের উল্টোপাশে দাঁড়িয়ে এ প্রতিবেদককে গৌরিগঞ্জের কৃষক রিগী যাদব বলেন, আমি সমাজবাদী পার্টির সমর্থক। তবে গান্ধী পরিবারের অবদান ভুলতে পারব না। কারণ, এই আমেথি অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল। সেটাকে এখন শহর বানিয়েছে গান্ধী পরিবার। পাশে দাঁড়ানো চাকরিজীবী এক যুবক ঝালমুড়ি খেতে খেতে কথায় অংশ নিলেন। বললেন, এখানে দিনের ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুত থাকছে। এটা ভাবা যায়না। কারণ, এখানে বিদ্যুত তো এতোদিনে আসার কথাই নয়। পাচ্ছি গান্ধীদের জন্য। তবে রাহুলজি দলের যে অবস্থানে আছেন সেখানে থেকে আরো অনেক কিছু করতে পারতেন। কিন্তু সেটাও করা ঠিক হতনা। তখন সেটি একপাক্ষিক হয়ে যেত। শিক্ষিত যুবক হিসেবে এটা আমরা বুঝি।
তবে রাহুল ও গান্ধী পরিবারের প্রতি ভালবাসার পাশাপাশি এখানকার মানুষের মুখে না পাওয়ার ক্ষোভও প্রকাশ পেল বেশ।
সনু নামে এক অটো চালকের কাছে-নির্বাচনের ফল কি আসতে পারে প্রশ্ন ছুঁড়তেই অকপটে বললেন, আশা করি রাহুলজি জিতবেন। তবে আশাটা হাই-ফাই নয়। কারণ, অনেক কিছু করার থাকলেও করেননি রাহুলজি। আমরা লেখাপড়া শিখেও অটো চালাচ্ছি। বিদ্যুতও নেই এলাকায়। বলুন কিভাবে হাই-ফাই আশা করি।
বেনারস থেকে মাত্র ১৭৯ কিলোমিটার দূরে এই আমেথি থেকে এর আগে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাজীব গান্ধী। ২০০৪ সাল থেকে এখানে দুই বার নির্বাচিত হয়েছেন রাজীবপুত্র রাহুল। তার আগে সোনিয়া গান্ধীই ছিলেন আমেথিবাসীর পাশে।
আমেথিতে গান্ধী পরিবারের প্রভাব বোঝা যাবে আমেথি রেল স্টেশন দিয়ে শহরে ঢুকলেই। মোড়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী। পরের মোড়েই লাঠি হাতে আছেন মহাত্মা গান্ধী। এ মূর্তিদুটোই বলে দেবে তারা এ শহরের প্রাণ। প্রতিদিনই তাদের গলায় আমেথিবাসী তাজা ফুলের মালা পরায়।
রাজিব গান্ধীর মূর্তির উল্টো পাশেই আম আদমি পার্টির অফিস। সেখানে দাঁড়িয়ে আমেথির স্টেশন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আফতাব বললেন, রাহুল ভাইয়াই জিতবেন, দিদি। আমেথির উন্নয়ন হয়েছে। আরো হবে। আর তা রাহুল ভাইয়াই করবেন। এর জন্য অন্য কারো আসার দরকার নেই। রাহুল ভাইয়া আমাদের আপন লোক। মুসলমানদের পুরো ভোট রাহুলের বাক্সেই যাবে বলেও জানান তিনি।
আফতাব আরো বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমেথিবাসীই নির্বাচন করে। এটাই রেওয়াজ। এবারও তাই করব। আমাদের ভোটেই রাহুল ভাইয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ফেরার পথে ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে আরেক তরুণ নিশান ত্রিপাঠী বলেন, আমেথি শুধু আমাদের নয়। পুরো গান্ধী পরিবারের। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অনেক কষ্ট করেছেন এবারের নির্বাচনে। আমরা তার পরিশ্রম নষ্ট হতে দেব না। তিনি তো আমেথিবাসীরই সন্তান।
জয় হয়তো হবে। কিন্তু লড়াইটা এবার জমবে বলেই ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের।
রেকর্ড অনুযায়ী, এর আগের নির্বাচনে ২০০৯ সালে রাহুল গান্ধী জিতেছিলেন ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ১৯৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ১৯৫। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বহুজন সমাজবাদী পার্টির আশিষ শুক্লা পেয়েছিলেন ৯৩ হাজার ৯৯৭ ভোট। বিজেপির অশোক সিং পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৫৭০।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। অরুণ শিবাজী নামে এক স্কুলের কথাতেও তাই এমনটিই আভাস পাওয়া যায়।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রাহুল জিতবেন। তবে পার্থক্যটা কমবে।
** ফের আচরণবিধি ভাঙলেন মোদী!
** আমেথি থেকেই ভারত গড়ার অঙ্গীকার মোদীর
** অন্যের ব্যর্থতায় ফিরবে বাম দলের কপাল!
** আমেথি থেকেই ভারত গড়ার অঙ্গীকার মোদীর
** জামায়াতকে সমর্থন করেছেন মমতা
** পশ্চিমবঙ্গে তারকাপ্রার্থী নিয়ে অস্বস্তি
** ‘আর্থিক প্যাকেজে’ মোড়ানো বিজেপির জোটবার্তা
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৪