কাশীপুর, কলকাতা থেকে: এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ভারতের ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনের শেষপর্ব অর্থাৎ নবম দফা ভোটগ্রহণ সোমবার। আর পশ্চিমবঙ্গের জন্য এদিন পঞ্চম দফা ভোট।
ইতোমধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে কলকাতার কয়েকটি স্থানে। কলকাতা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের রতন বাবু রোডে রোববার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন সিপিআইএম কর্মী।
সকালে উত্তর কলকাতার কাশীপুরে আক্রান্ত হন সিপিআইএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক কল্যাণ সমাজদারও। অসুস্থ ছেলের ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, তখনই মোটরসাইকেল নিয়ে দশ যুবক তাকে তাড়া করে।
কল্যাণ সমাজদার সিপিআইএম পার্টি অফিসে আশ্রয় নেন। পার্টি অফিসের ভেতরে ঢুকে তার ওপর হামলা করা হয়। রাস্তায় টেনে বের করে তাকে মারধর করা হয়।
গুরুতর আহত কল্যাণ সমাজদারকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলঘরিয়ায় আক্রান্ত হন সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য সায়নদীপ মিত্রসহ সাত জন। বাম দলগুলোর অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের মদন মিত্রের নেতৃত্বে হামলা হয়। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাম নেতারা।
কলকাতা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে বেলঘরিয়ায় ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সিপিআইএম অফিসে হামলা হয় শনিবার। এতে আহত হন ৭ সিপিআইএম কর্মী। এ হামলার পেছনেও অভিযোগের তীর শাসকদল তৃণমূলের দিকে।
বনেদি হিসেবে খ্যাত কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের লড়াই জমজমাট। প্রধান চারটি দলেরই প্রার্থী হেভিওয়েট। এ কেন্দ্র দখলে রাখা তৃণমূলের সংসদীয় নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চ্যালেঞ্জ।
বাম দলগুলোর প্রার্থী পৌরসভার বিরোধী নেত্রী রূপা বাগচি। সদ্য কংগ্রেসে ফেরা সোমেন মিত্র লড়ছেন সর্ব ভারতীয় হাতচিহ্নের প্রতীকে। বিজেপির প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। ২০১১ সালের নির্বাচনে এ কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা আসনেই তৃণমূল জিতেছিল।
কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে পরপর সাতবার জিতেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালাবদলের পর তার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপ-নির্বাচনে জিতেছেন সুব্রত বক্সি। এবার তিনিই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। শক্ত ঘাঁটিতে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বামেরা আস্থা রাখছে অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখার্জির ওপর।
বিজেপি দাঁড় করিয়েছে প্রবীণ সৈনিক তথাগত রায়কে। কংগ্রেস প্রার্থী মালা রায়।
শেষ দফায় ভোটগ্রহণ হতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি আসন হল- পুরোনো কলকাতা অর্থাৎ উত্তর কলকাতা, কলকাতা দক্ষিণ, যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার, জয়নগর, মথুরাপুর, বারাকপুর, দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, বনগাঁ, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, ঘাটাল, কাঁথি ও তমলুক।
ওই ১৭টি আসনে প্রার্থী রয়েছেন ১৮৮ জন। এদিন ভোট দেবেন দুই কোটি ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৪৩ জন ভোটার। ৩১ হাজার ৩৯২টি বুথে ভোট নেওয়া হবে।
এ রাজ্যে পঞ্চম তথা শেষ দফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছে নির্বাচন কমিশন৷ গত চার দফায় রাজ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও শেষ দফায় কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না কমিশন৷
এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য ৩৫০ প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আসা মোট ৩৪১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি আরও প্রায় অতিরিক্ত ১৯২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে এসে পৌঁছেছে৷ অর্থাত্ শেষ দফায় ১৭টি কেন্দ্রে মোট ৫৩৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে৷
এছাড়া সোমবার ভোটের দিন আরও ১২ শতাংশ বাহিনীকে রিজার্ভে রাখা হচ্ছে৷ যেসব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সম্ভব হবে না সেখানে রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশকে বুথ পাহারার দায়িত্বে রাখা হবে৷
কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি রাজ্যের মোট ৩৬ হাজার সশস্ত্র বাহিনী সদস্যও নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবেন।
গত ১৭ এপ্রিল প্রথম দফায় চারটি, ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ছয়টি, ৩০ এপ্রিল তৃতীয় দফায় নয়টি এবং ৭ মে চতুর্থ দফায় ছয়টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার মোট ৪২টি আসন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৪