খালি পকেটে প্রেম ফসকায়। জোর করে ঘর বাঁধলে দুঃখে ভাসায়।
ভোট শেষে টাকার কথাটা বেশি করে উঠছে। এক একটি কেন্দ্রে প্রায় ১৫ লাখ ভোটার। এত লোককে একার পক্ষে ভালোবাসা কী কম কথা। সবাইকে না হলেও বেশির ভাগকেই ভালবাসতে হবে। ভালোবাসা ফেরত পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে জেতার চান্স। নির্বাচন কমিশনের নিয়মে, এক একজন খরচ করতে পারে ৭০ লাখ টাকা। তার বেশি হলেই আইনের কাঁটা। ভোটারদেরও মাথা গরম। কখন যে কাকে ঝাঁটা মেরে তাড়াবে তার ঠিক কী। দেখা গেল স্রোতের মতো টাকা ঢেলেও পাবলিকের মন পেল না প্রার্থী। পরিণতি—গোহারা হেরে মুখ লুকিয়ে বিদায়।
নেত্রী বা নির্বাচনপ্রার্থী যদি কপ্টারে চড়ে ওড়েন তাহলে কী কদর বাড়ে। ফল বেড়োলে জানা যাবে। গ্রামের গরিব গুর্বোরা হাঁ করে আকাশ পানে চেয়ে দেখেছেন তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রঙিন হেলিকপ্টারে ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে নেমে আসছেন। মাথার ওপর ঘর ঘর করে ঘুরছে ব্লেড। হাওয়ায় চারপাশে ওলটপালট। মানুষ কী তাঁকে দেখে মুগ্ধ। ইভিএমে তৃণমূল প্রতীকের পাশের বোতামটা পটাপট টিপল। প্রত্যাখান বা সমর্থনের উত্তর আর একটু দূরে। তৃণমূলের সব প্রার্থীই যে আকাশচারী, এমনটা নয়। অনেকে পোস্টার বা দেওয়াল লিখলেও বিল পেমেন্ট করেননি। হারবেন ধরে নিয়ে কৃপণ হয়েছেন।
সব প্রার্থীদের বেলাতেই তাই। জেতার আশা না থাকলে টাকা উড়িয়ে তামাশা দেখানো কেন! দলের দেওয়া টাকাও পকেটে পুরে রেখেছেন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে ভেবে। দলের কর্মীরা টাকার তাগাদা দিতেই জানিয়েছেন, টাকা কী খোলামকুচি যে চাইলেই দেওয়া যায়।
রাজনৈতিক দলের কথা না হয় বাদ গেল, নির্বাচন কমিশনও তো বে-লাগাম। খরচ কমাতে গিয়ে বারে বারে খরচ বাড়িয়েছে। এবারে রাজনৈতিক দল আর নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিত ব্যয় ৫০ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৫২-তে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সব মিলিয়ে নির্বাচনী খরচ ছিল মাত্র ১০.৪৫ কোটি। তখন এক পয়সার দাম ছিল অনেক। টাকাও ছিল দামী। ব্যাঙের ছাতার মতো এত রাজনৈতিক দলও গজায়নি। মাত্র চারটি দল নির্বাচনে লড়েছে। এবার নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ ৩৯টি দল। তখন ভোটার ছিল সতের কোটির একটু বেশি। এখন ৮১কোটি ৪৫ লাখ ৯১ হাজার ১৮৪। খরচের বহর তো বাড়বেই। প্রচারের টাকা লুঠে নিচ্ছে টিভিওয়ালারা। এই গরমেও তাদের পৌষ মাসের খুশি। ব্যয়ের অঙ্ক দেখে একটা প্রশ্নই মাথা চাড়া দিচ্ছে, যারা উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন তাঁদের বাছতেই এই অবস্থা, উন্নয়নের জন্য টাকা থাকবে তো।