ঢাকা : ভারতের ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)মনোনীত ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী ।
কাল মোদীর শপথ।
শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। এ ছাড়াও শ্রীলঙ্কার্ প্রেসিডেন্ট রাজাপাকশেসহ সার্কের অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানরা ।
নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া মোদী ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের উজ্জৈন জেলার বড় নগরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদী ও মা হীরাবেন মোদী।
খুব ছোটবেলায় বাবার চায়ের দোকানে চা বিক্রির কাজ করেছেন আজকের বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই নেতা। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় যোগ দিয়েছিলেন ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরে।
মোদীর সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী স্কুলে পড়ার সময় মাত্র তের বছর বয়সে যশোদাবেন চিমনলাল নামে এক কিশোরীর সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। এরপর ১৭ বছর বয়সে তাদের বিয়ে হয়। খুব অল্প সময় যশোদাবেনের সঙ্গে ঘর করেছেন মোদী। রাজনীতির টানে স্ত্রী ও পরিবার ছেড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। যোগ দিয়েছেন উগ্র হিন্দু মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে(আরএসএস)। তারপর বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এক সময় নিজের কর্মদক্ষতার গুণেই মোদী সংগঠনটির শীর্ষ পদে আসীন হন। এরপর ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসংঘ নিষিদ্ধ হলে ১৯৮৫ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপিতে যোগ দেন মোদী। নির্বাচিত হন গুজরাট বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। এক সময় নিজের যোগ্যতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়েই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
তারপর ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। এর পর থেকে টানা ১২ বছর গুজরাটের মসনদ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করেন তিনি। গুজরাটের উন্নয়নে মোদী নেতৃত্বের প্রশংসা বিরোধী শিবির থেকেও শোনা গিয়েছে বহুবার।
কিন্তু ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মুসলিমকে হত্যার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। শুধু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয় দেশ বিদেশের সর্বত্র অভিযোগের তীর তার বিরুদ্ধেই গেছে। গুজরাট দাঙ্গার অভিযোগে ২০০৫ সালে মোদীর ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র।
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে দলের প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিসহ বহু নেতার বিরোধীতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে।
সববাধা পেরিয়ে যখন ভাদোদরা নির্বাচনী আসনে মনোনয়ন দাখিল গিয়েছেন তখন নতুন করে আবার বাধা।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হলো বিবাহিত মোদী মনোনয়নপত্রে স্ত্রীর নামের জায়গা খালি রাখতে পারবেন না। কংগ্রেস এর পক্ষে জোরালো দাবি তুলেছে, এমনকি তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আহবানও জানিয়েছিল।
অবশেষে বিরোধী শিবিরের চাপের মুখে স্ত্রী যশোদাবেনকে স্বীকৃতি দিয়ে মনোনয়নপত্রে স্ত্রীর নামের জায়গায় লিখলেন স্কুল শিক্ষিকা যশোদাবেন চিমনলালের নামটি। স্বীকৃতি দিলেন প্রায় ৪৬ বছর আগে বিয়ে করা যশোদাবেনকে।
তারপর ভিন্ন ইতিহাস। যশোদা ঘোষণা দিলেন স্বামী নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী না হলে জুতো পরবেন না তিনি। খাবেন না ভাত। চলছে স্বামীর জন্য মন্দিরে মন্দিরে প্রার্থনা।
তার প্রার্থনা কবুল করেছেন ভগবান। বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন তিনি।
আর মাত্র একদিন । তারপর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংবিধানের সাংবিধানিক নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। নেতৃত্ব দিবেন ১শ’ ২০ কোটি মানুষের দেশ ভারতকে।
ভারতের উন্নয়নে কাজ করার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসা মোদী কি তার দেশকে নিয়ে যেত পারবেন তার গন্তব্যে? কিংবা ভারতের উন্নয়নে কাজ করতে গেলে কি কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন না মোদী? বিশ্ব রাজনীতির আলোচ্য সূচিতে এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ফিরে আসি যশোদাবেন প্রসঙ্গে, স্বামীকে প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে সমাসীন করার প্রত্যয়ে যে নারী ভাত খাবেন কিংবা জুতো পরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেই যশোদাবেন চিমনলাল কি এবার জুতো পরবেন? কিংবা স্বামীর শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পেয়ে নতুন কোনো দাবি তুলবেন যশোদা? জানার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে কৌতূহলী রসিক পাঠকদের...।
বাংলাদেশ সময় : ১২২৮ ঘণ্টা, মে ২০১৪