ঢাকা: ‘বৌ’ নামেই খ্যাত তিনি। নির্বাচনে হেরেও হয়েছেন মন্ত্রী।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের টুইট বার্তায় তোলা প্রশ্নে এখন বিতর্কের ঝড় উঠেছে ভারতের রাজনীতিতে। মাত্র এক দিন আগে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন স্মৃতি ইরানি।
মোদীর শপথ নেওয়ার পর একের পর এক মন্ত্রীরা শপথ নেন। তাদের মধ্যে স্মৃতিও ছিলেন। মোদীর মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য স্মৃতির বয়স ৩৮। টেলিভিশন সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। গৃহিণী চরিত্রে জনপ্রিয় হওয়ার পর তাকে ভারতীয়রা ‘বৌ’ নামেই চেনেন।
ইরানি আমেথি থেকে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়ে হেরে যান। কিন্তু হয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী, সামলাবেন শিক্ষার পুরো দায়িত্ব।
ভারতের এনডিটিভি তাদের অনলাইন খবরে বলছে, অজয় মাকেন কটাক্ষ করে টুইট বার্তায় বলেছেন, কী দারুণ ক্যাবিনেট মোদীর! এইচআরডি মিনিস্টার (যিনি শিক্ষার দেখভাল করবেন), সেই স্মৃতি স্নাতকই নন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের ১১ পৃষ্ঠায় দেখুন! এমন একজনকে কী করে এমন গুরু দায়িত্ব দেওয়া হলো! সে প্রশ্ন তুলে বিস্ময় জানান মাকেন।
জবাবে ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তার (স্মৃতি) সম্পর্কে এমন বলাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বিরোধীদল নিজেদের ঘরের দিকে তাকান না!
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকের পর বলেন, স্মৃতি যে অনায়াসে-দক্ষতায় হিন্দি, ইংরেজিতে কথা বলেন, তাতে তার যোগ্যতা, ক্ষমতা যাচাই করেই তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রবিশংকর আরো বলেন, স্মৃতি অভিনেত্রী হলেও কয়েক বছর ধরে রাজনীতিটা তিনি খুব নিষ্ঠার সঙ্গেই করছেন। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি দলের পক্ষে টিভি বিতর্কেও অংশ নেন। স্মৃতি নিজেই আমেথিতে কংগ্রেসের সহ-সভাপতিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় স্মৃতি তার সর্বশেষ যে যোগ্যতার উল্লেখ করেছেন, তা হলো, ব্যাচেলর অব কমার্স, পার্ট-ওয়ান, স্কুল অব ওপেন লার্নিং (করেসপন্ডেন্স) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৪।
আর রাজ্যসভার ওয়েবসাইটে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাবে বলা হয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব করেসপন্ডেন্সের হোলি চাইল্ড অক্সিলিয়ামে পড়াশোনা করেছেন স্মৃতি।
শুধু কি ভারতের রাজনীতি, খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও ঝড় উঠেছে।
মাকেনের কথার সমালোচনা করেছেন জম্মু এবং কাশ্মির চিফ মিনিস্টার ওমর আব্দুল্লাহও।
আর অনেক সমালোচক ‘বৌ’র পক্ষ নিয়ে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছেন?
২০০৩ সালে ‘কিউ কি সাস ভি কাভি বাহু থি’ সিরিয়ালে অভিনয়ের সুবাদে স্মৃতি ভারতের ঘরে ঘরে পরিচিত। সে সময়ই ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে যোগ দেন তিনি।
দিল্লির এক রক্ষণশীল পাঞ্জাবি-বাঙালি পরিবারে বেড়ে উঠা বিনোদনজগতে আসতে অনেকটা সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। জীবনের প্রথম আয় ছিল ২০০ রুপি।
১৯৯৮ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় নাম লেখান স্মৃতি। এরপর পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। পেটের দায়ে ম্যাকডোনাল্ডস রেস্তোরাঁয়ও কাজ করেছেন।
টিভি সিরিজ ‘উ লা লা’তে কাজ করার সুযোগ পেয়ে সেখানে তার অভিনয় চোখে পড়ে একতা কাপুরের। ব্যাস, বৌ বনে যান স্মৃতি!
সব মিলে মোদীর মন্ত্রিসভায় এই বৌ এখন কী করেন- সেটাই প্রত্যক্ষ করবেন ভারতবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪