ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে হজযাত্রায় অনিয়মের অভিযোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১১

কলকাতা: ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ছিল, হজ সফরের জন্য ‘ভি আই পি কোটা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, কোটার অপব্যবহার হচ্ছে। তাই এটি তুলে দেওয়াই উচিত।

’ যদিও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান ও তৃণমূল সাংসদ ভি আই পি কোটা ব্যবহার করেই তার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে হজ সফরে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ। পাঁচ বছরের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের জন্য তারা যাচ্ছেন হজ সফরে, যা অল ইন্ডিয়া হজ কমিটির নিয়মাবলীরও বিরুদ্ধে।

এবছর এই হজ সফরকে কেন্দ্র করে উঠছে অনিয়মের অভিযোগও। এবছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে হজ সফরে যাচ্ছেন এক হাজার ৪০৭ জন যাত্রী। এছাড়াও ওড়িশা ও ত্রিপুরা থেকে আরো প্রায় এক হাজার হজযাত্রী কলকাতা হয়েই রওনা দেবেন।

গত ১৭ই অক্টোবর দমদম বিমানবন্দর থেকে মক্কার উদ্দেশে হজযাত্রীদের নিয়ে প্রথম বিমানটি রওনা দিয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দমদম বিমানবন্দর থেকে হজযাত্রীদের নিয়ে বিমান যাবে। মোট ৩৬টি বিমান কলকাতা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে।

হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার কাছে ইচ্ছুক হজযাত্রীদের তালিকায় এমন ৩৭ জন নাম পাঠানো হয়েছিলো, যারা পাঁচ বছরের মধ্যেই অন্তত একবার করে হজ সফরে গিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ‘রিপিটার’দের আবেদন গ্রহণ করেনি কমিটি।

কিন্তু দেখা গেলো এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে উপেক্ষা করেই সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম ভি আই পি কোটায় আজমত হোসেন (পাসপোর্ট নম্বর জে/১০০৯৮৭৮) এবং আবদুল মহম্মদের নাম পাঠান। ভি আই পি কোটায় আসা এই দুটি নাম যেহেতু হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার এখতিয়ারের বাইরে, তাই সেগুলি বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে অভিযোগ করে হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার তরফে ডা. ফুয়াদ হালিম বলেন, ‘হজ সফরের ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দেয়। যেখানে লাখ লাখ মানুষ প্রতিবার আবেদন করেন, বহু মানুষ বাদ পড়েন, সেখানে একই ব্যক্তিকে দু’-দুবার কেন সরকার ভর্তুকি দেবে? এটা হতে পারে না। এই ভি আই পি কোটা তুলে দেওয়া উচিত, সুপ্রিম কোর্টও তাই বলেছে। ’

বাস্তবিকই সরকার প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার হজযাত্রীকে তার সফরের খরচে ভর্তুকি দেয়। যদিও আবেদন পড়ে প্রায় তিন লাখ। অর্থাৎ লক্ষাধিক মানুষ সুযোগ পান না। তাই পাঁচ বছরের মধ্যে একবার গেলে আর দ্বিতীয়বার যাওয়া যায় না। কিন্তু খোদ রাজ্য হজ কমিটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানই এখন নিয়ম ভাঙার খেলায় মেতেছেন বলে অভিযোগ।

এরই পাশাপাশি, কারা হজ সফরে যেতে ইচ্ছুক তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হজ কমিটি অব ইন্ডিয়াকে জানাতে হয়। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এরপরেই দেখা যায় বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর পরেই রাজ্য হজ কমিটির নতুন চেয়ারম্যান হন হাজি নুরুল ইসলাম। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় ৫১জন আবেদন পাঠান হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার কাছে। স্বাভাবিকভাবেই হজ কমিটি অব ইন্ডিয়া সেই আবেদন গ্রহন করেনি।

এদিকে, হজ সফরের প্রাক্কালে প্রথামাফিক সরকারি ওয়েবসাইটে হজযাত্রীদের উদ্দেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছা বার্তা না জানানো নিয়েও কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ঘোষণা করা হয়েছিল যে, বিমানবন্দরে হজযাত্রীর জন্য শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। তা হয়নি। প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে রাজ্য হজ কমিটির তরফে। প্রায় ১০ হাজার যাত্রীর জন্য প্যাকেট করা হলেও প্রতিবার তার জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। কিন্তু এবার টেন্ডার না ডেকেই পছন্দের ব্যবসায়ীকে দিয়েই এই প্যাকেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান হাজি নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।