ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বসুন্ধরা পেপার মিলস্ লিমিটেডের ৩০তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
বসুন্ধরা পেপার মিলস্ লিমিটেডের ৩০তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকা: বসুন্ধরা পেপার মিলস্ লিমিটেডের ৩০তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিনিয়োগকারীদের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়েছে।

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির উপদেষ্টা ও বিকল্প পরিচালক এ আর রশীদি। পরিচালকমণ্ডলীর পক্ষে মো. ইমরুল হাসান, মো. নাজমূল আলম ভূইয়া, নিরপেক্ষ পরিচালক খাজা আহমেদুর রহমান ও মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিন সভায় সংযুক্ত ছিলেন। সাধারণ সভা সঞ্চালনা করেন কোম্পানি সচিব এম. মাজেদুল ইসলাম।

সভার শুরুতেই সভাপতির বক্তব্যে কোম্পানির বিকল্প পরিচালক এ আর রশীদি বলেন, কৃষি থেকে দ্রুত উৎপাদনমুখী শিল্পে পরিবর্তন হওয়া একটি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির নাম এখন বাংলাদেশ। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশ তার অবস্থান এরই মধ্যে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১০০টিরও বেশি পেপার মিল রয়েছে, তার মধ্যে ৩০টি পেপার মিল উৎপাদনক্ষম রয়েছে। এই কাগজ মিলগুলো তাদের উৎপাদনের মাধ্যমে এদেশের কাগজের বাজারে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। যদিও এ-ফোর কাগজের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে, তবে শিল্প-গ্রেড, প্যাকেজিং কাগজ, টিস্যু এবং বিশেষ-গ্রেড কাগজের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিও আলোচ্য বছরে কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কাগজ শিল্পের চূড়ান্ত চাহিদার মৌসুমে মুদ্রাস্ফীতি, ব্যাপক হারে ডলার সংকট, কাঁচামালের অপ্রতুলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে কোম্পানির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলোচ্য বছরে উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেলেও বিগত বছরের তুলনায় মোট আয় ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা এ বছর ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪৫.৫০ কোটি টাকা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও অত্র কোম্পানি ১০১২ দশমিক ১২ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচ্য বছরে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অত্র কোম্পানি প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

তিনি আরও বলেন, কাগজ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এর জন্য ব্যবহৃত সমস্ত কাঁচামালই বিভিন্ন দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করতে হয়। এছাড়া কাগজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহের অপ্রতুলতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি, আর্ন্তজাতিক বাজারে পাল্পের মূল্যের বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে তারতম্য, আর্ন্তজাতিক রুটে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণে কাগজ ও কাগজজাত সামগ্রী উৎপাদনের ব্যয় বিগত বছরেও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিক্রয় ও বিপণনের সংশ্লিষ্ট যানবাহনের সেতু টোলসহ আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চার্জ/লেভি হ্রাস করার জন্য ও বিদেশি কাগজ আমদানি বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ আর রশীদি বলেন, এ বছরেই আমরা জিআরআই মানদণ্ড অনুযায়ী ইএসজি অর্থাৎ সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছি। যেখানে পরিবেশ রক্ষা, কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ, কারখানা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পুনঃব্যবহারে আমাদের উদ্যোগগুলো সবিস্তারে প্রকাশ করা হয়েছে। সুশাসন পরিপালনে আমাদের কোম্পানি আজ একটি অনুকরণীয় মানদণ্ড। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা সুশাসন নিশ্চিত করেছি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তথ্য প্রকাশ বিবেচনায় অত্র কোম্পানি বিগত ৩০ বছরের আর্থিক সক্ষমতার পরিমাপকসমূহ আপনাদের কাছে প্রেরিত বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।

আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, বিধিবদ্ধ অনুশাসন প্রতিপালন, সুযোগের ব্যবহার এবং দক্ষ মানবসম্পদ টেকসই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সফলতার পূর্বশর্ত এবং পাশাপাশি একটি জাতি গঠনের অনুঘটক। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সকল পরিমিতিতে সফলতা অর্জনের জন্য সরকারকে সহায়তা করার লক্ষ্যে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সাসটেইনেবিলিটি গোল-২০৩০ ঘোষণা করেছি এবং বেশ কয়েকটি দৃশ্যমান প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের প্রিয় এই কোম্পানি সব চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করে চলেছে। আমরা আগামীর প্রতিটি সংকট মোকাবেলায় উৎপাদন সক্ষমতা ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীলতায় শীর্ষে উঠে অত্র কোম্পানির জন্য একটি স্থায়ী অবস্থান গড়ে তুলতে চাই। কোম্পানির আর্থিক অর্জনকে লভ্যাংশের আকারে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বণ্টনের বিষয়ে পরিচালকমণ্ডলী সবসময়ই দায়িত্বশীল ও সচেতন রয়েছেন। শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত হওয়ার পর অর্থাৎ বিগত পাঁচ বছরে ৭৯ দশমিক ৫০ কোটি টাকা লভ্যাংশ প্রদান করেছি। আলোচ্য বছরেও পরিচালকমণ্ডলী কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ অর্থাৎ ১৯ দশমিক ১১ কোটি টাকা প্রদানের জন্য প্রস্তাব রেখেছেন, যা আপনাদের সদয় অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার বার্ষিক এ সভায় সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মতামত দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এই বার্ষিক সাধারণ সভায় ৩০ জুন ২০২৩ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন; শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ, পরিচালকদের পুনঃনির্বাচনসহ কোম্পানির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক নিয়োগ বিষয়ক আলোচ্যসূচি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।

সভায় আরও সংযুক্ত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান, চিফ অপারেটিং অফিসার মির্জা মুজাহিদুল ইসলাম, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান, বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক এবং কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২৩
এসএমএকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।