ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল এসেছিল। তাদের সঙ্গে ঋণ প্যাকেজ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে এটা পেয়ে যাব। আজকে মূলত তারা এসেছে রাজস্ব খাত, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি এগুলো দেখার জন্য। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছে, এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলাপ করবে।

তিনি বলেন, আমাদের স্থিতিশীলতা কিন্তু ফিরে আসছে। সম্পূর্ণ আসে নাই, তবে এখন সময় বিনিয়োগের। আপনারা দেখবেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট আগের মতো ওঠানামা করছে না। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লিকুইডি সার্পোট লাগছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংকে কিছুটা ফিরে আসছে। ইসলাসী ব্যাংক সব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকগুলোও আস্তে আস্তে ফিরে আসবে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রেমিট্যান্স খুবই ভালো। রপ্তানিও হচ্ছে ভালো, আমদানি একটু কম আছে। তবে আগের থেকে একটু বেড়েছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি কিছু কম আসছে, সেটা কিছু রেস্ট্রিকশনের কারণে। সেটা আমরা চিন্তা করছি কী করা যায়। তারা (আইএমএফের প্রতিনিধিদল) আমাদের এখানে থাকবে কিছু দিন। আমরা তাদের বলেছি, আমরা এমন কিছু নেব, যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। আমরা এমন কিছু নেব না যেটা নিজের.... যাতে আগামী সরকারে যেই আসুক, তারা যেন সেটা ফলো করে আমরা কতটুকু নেব এবং সেটা বিবেচনা করে ভেবেচিন্তে নেবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, তারা কতোগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে, সেটা করতে পারব কি না, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে।

অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে আমরা আবার আলোচনা করে বলব। চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলে আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে, যেমন ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে।

তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় যে কথা বলে আসছি, সেখানে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থ বছরের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওপেকফান্ড সব মিলিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের আশা। সেখান থেকে পাব কত, সেটা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলতে পারবে। কিছু দিন পর এডিবি আসবে, ওপেকফান্ডের টাকা আসবে। সব মিলিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার পাব। কারণ আমাদের অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলো এক-দুই বিলিয়নে চলে আসবে না। একেকটা ৪০০ ধেকে ৫০০ মিলিয়নের প্রকল্প। তবে পুরো টাকা এক বছরে আসবে না।

চলমান ঋণ সহায়তার আওতায় আসাদের ৪.৭ বিলিয়নের মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ৩ বিলিয়ন চলে আসবে। বাকি যেটা সেটাতো ২০২৬ পর্যন্ত যাবে না, তখন কী করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ আগামী মার্চে আবার আসবে। ১.১ বিলিয়ন ডলার তো ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে চলে আসবে। এর পরেরটার জন্য মার্চ মাসে রিভিউতে আসবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবায়ন ও আগামী আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে সংস্থাটি। এখন চতুর্থ কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২৪
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।