ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোট ব্যয় ৫৮৩৫৯ কোট

পিইডিপি-৩ একনেকে সভায় উঠছে মঙ্গলবার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
পিইডিপি-৩ একনেকে সভায় উঠছে মঙ্গলবার

ঢাকা: তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি) প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওঠানো হবে।

শেরে বাংলানগর পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হবে।



পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এতে করে প্রকল্পটির ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়ানো হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ৫৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ থেকে জুন ২০১৬ মেয়াদী প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে মেয়াদও জুন ২০১৭ নাগাদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন বাজেট ২২ হাজার ১৯৬ কোটি, যার মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীরা বাজেট সাপোর্ট হিসেবে দিয়েছে ৩ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা।

প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অতিরিক্ত ৪০০ মিলিয়ন স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। দেশে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণে সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তকৃত ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটির আওতায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, কর্মসূচির আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৯৬০ কোটি, অন্যান্য ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২৭২ কোটি, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই) ৮০০ কোটি অতিরিক্ত অর্থায়ন করবে।

প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ৬৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় বাড়ছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। নানা উদ্দেশ্যে এই অর্থ দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এর মধ্যে অন্যতম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গমনোপযোগী সব ছাত্রছাত্রীর প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণে সামাজিক বৈষম্য হ্রাসকরণ, বিদ্যালয়ে ভর্তি বৃদ্ধি ও পাঁচ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকরণ, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, প্রাক-প্রাথমিক হতে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর শিশুবান্ধব শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও ফিডিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

সব শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাসামগ্রী সরবরাহ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান ও চাহিদাভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে এবং লোকবল নিয়োগে অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে দাতাগোষ্ঠী। এদের মধ্যে অন্যতম ঋণ দাতা বিশ্বব্যাংক।

মধ্য-মেয়াদী পর্যালোচনার ভিত্তিতে  কর্মসূচির ব্যয় ও সময় পুনঃনির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। এর ফলে একদিকে প্রকল্পটির যেমন ব্যয় বাড়ছে, তেমন করে সময়ও বাড়ছে একবছর। প্রাথমিক অবস্থায় বিদ্যালয়ে শিখন-শেখানোর গুণগতমানের উন্নয়ন সাধন ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণেই প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে।

এছাড়া, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি), অস্ট্রেলিয়ান এইড, কানাডিয়ান (সিডা), ইউনাইটেড কিংডম'স ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), সুইডিশ (সিডা) ও ইউনিসেফ প্রকল্পটির অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর নানা গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ২০১১ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয় বলে জানা গেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুশাসন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে শিক্ষার ভূমিকা এর মধ্যে অন্যতম।

এ সব বিষয় বিবেচনা করে বিগত ১০ বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য হারে শিক্ষার্থী বৃদ্ধি করা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। নারী শিক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে ভর্তিকৃত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সমতা আনয়ন সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় আরো নতুন নতুন কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। নতুন নতুন শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার, আসবাবপত্র সরবরাহ, টয়লেট নির্মাণ, আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য নলকূপ স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ করা হবে। নানা ধরনের শিক্ষা প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ, শিশুজরিপ, শিক্ষাক্রম সংশোধন, আইসিটি এডুকেশন ও শ্রেণিকক্ষভিত্তিক শিক্ষার্থী মূল্যায়ন কাজে এই অর্থব্যয় করা হবে।

পিইডিপি-৩-এর চারটি কম্পোনেন্টের আওতায় ২৯টি সাব-কম্পোনেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নানা কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম শিক্ষা কার্যক্রমের অসম্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে দেশে বিপ্লব সৃষ্টি করা। শিক্ষকদের চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া।

এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার সব পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষার বাস্তবায়ন, জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাচালুকরণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার সুফল তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় শিক্ষার সুযোগ থাকছে। এই আইটেমটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পৃথক ইউনিট সৃষ্টির মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।