সিলেট: বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্ট কালের অবরোধে সোমবার (১২ জানুয়ারি) পর্যন্ত বিগত সাত দিনে সিলেট অঞ্চলে তিন কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন মালিকরা।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) সিলেটের পরিবহন মালিকরা এ তথ্য জানান।
সিলেট পরিবহন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের বিভাগীয় কমিটির সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধের এক সপ্তোহে সিলেট বিভাগ জুড়ে ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসসহ দেড় শতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এতে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি ঘটনার বিপরীতে মামলা দায়ের করেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট বিভাগ জুড়ে বিগত সাত দিনের অবরোধে যাত্রীবাসী বাস, ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ ২০/২৫টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় শতাধিক গাড়ি। বিশেষ করে বিকেলে, সন্ধ্যায় ও রাতে গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বেশি।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শমসেরনগরে রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে রাখায় দুর্ঘটনা কবলিত হয় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে ইঞ্জিন ও ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আহত হন অনেকে।
জানা যায়, সোমবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই ট্রাকে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা। এদিন সন্ধ্যায় নগরীর সুবিদ বাজারে সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।
একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে দক্ষিণ সুরমা বাস টার্মিনালে ঝটিকা মিছিল থেকে ১৫/২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধ সমর্থকরা।
রোববার (১১ জানুয়ারি) রাতে জেলার গোলাগঞ্জে বাসে আগুণ ও একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। একই রাতে নগরীর কুমারগাঁওয়ে লাফার্জ সুরমার সিমেন্ট ভর্তি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত যান।
শনিবার (১০ জানুয়ারি) রাতে নগরীর দক্ষিণ সুরমায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরে পুলিশ-ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলাকালে ৫টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এদিন রাতে কানাইঘাটে মালামাল আনলোড করার সময় একটি ট্রাক ভাঙচুর করে দুবৃর্ত্তরা।
শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর দক্ষিণ সুরমা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তেলিবাজারে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও একটি সিএনজি অটোরিকশাও ভাঙচুর চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই সড়কে রাত সাড়ে ৯টায় সিলেটে একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা।
ওইদিন দক্ষিণ সুরমায় একটি বাসও ভাঙচুর করা হয়।
বুধবার (৭ জানুয়ারি) সকালে ২০ দলীয় জোটের ঝটিকা মিছিল থেকে নগরীর আম্বরখানায় ৩টি গাড়ি ভাঙচুর ও একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় আগুন লাগানো হয়। একই দিনে জকিগঞ্জে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে অবরোধকারীরা।
মঙ্গলবার (০৬ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১০ টায় সিলেটে একটি ট্রাক, একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ৩টি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
ওইদিন সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে ১০/১২টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ওই দিন সিলেটের কানাইঘাটেও একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাঙচুর অবরোধ সমর্থনকারীরা।
এর আগে সোমবার (০৫ জানুয়ারি) রাত ৯টায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল করা হয়। এসব মিছিল থেকে নগরীর শিবগঞ্জে ৩টি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ ও কমপক্ষে সরকারি গাড়িসহ ২০/২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়াও অবরোধের পঞ্চম দিন শনিবার (১০ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন, সিএনজি চালিত তিনটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। একই দিনে শহরের কুসুমবাগ এলাকায় ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (০৮ জানুয়ারি) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলায় ১৫টি লেগুনা ও বাটা ও বাটারফ্লাই শো রুমে ভাঙচুর করা হয়। সোমবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে দুটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান আবউল কালাম বাংলানিউজকে জানান, এক সপ্তাহে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৭০ ভাগ গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কম হচ্ছে।
এরপরও গুপ্ত হামলা করে ভাঙচুর ঠেকাতে নতুন কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে আসামিদের গ্রেফতারেও পুলিশ সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫