ঢাকা: গত আড়াই বছরে সোনালী ব্যাংকে বিশ্বাসী ঋণে (এলটিআর বা লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্ট) কোনো অনিয়ম বা অবিশ্বাসের ঘটনা ঘটেনি। একথা জানিয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রদীপ কুমার দত্ত বাংলানিউজকে বলেছেন, সোনালী ব্যাংকে অতীতের মতো আর কোনো জালিয়াতি (স্ক্যাম) হবে না।
সোমবার (১২ জানুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন। এসময় দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। তুলে ধরেন ব্যাংকটির অতীত ও বর্তমান অবস্থা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন এই প্রধান নির্বাহী।
প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, এক সময় সোনালী ব্যাংকে বিভিন্ন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। অতীতের মতো কোনো এখন আর ঘটনা ঘটছে না। এখন আমরা কঠিনভাবে সবকিছু তদারকি করছি। আমি যোগ দেবার পর তদারকরি জন্য অডিট ও মনিটরিং টিম হিসেবে একটি আলাদা বিভাগ করেছি।
এই বিভাগের কাজ হলো ৬ মাস পরপর কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা তদন্ত করে খুঁজে বের করা। যদি অতীতে পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ওই ধরনের অনিয়ম হতে পারতো না। যেহেতু এখন কঠোরভাবে তদারকির পদক্ষেপ নিয়েছি, সেহেতু ভবিষ্যতে অনিয়ম হওয়ার কোনো আশংকা আর নেই। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকও এখন বেশ সচেতন। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করছে। দুই একটি ক্ষেত্রে যদি অনিয়ম কেউ করেও তবে ধরা পড়ে যাবে।
‘বিশ্বাসী-ঋণ’-র বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্বাসী ঋণের ক্ষেত্রে আগে কিছু অনিয়ম হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অ্যাগ্রেসিভ বিনিয়োগের কারণে এটি হয়েছে। তবে ২০১২ সালের পর থেকে অনিয়ম কমে এসেছে। আর আমার আড়াই বছরে (এমডি হিসেবে যোগদানের পর) সোনালী ব্যাংকে বিশ্বাসী-ঋণে কোনো অবিশ্বাসের ঘটনা ঘটেনি। কোনো অনিয়ম হয়নি। বিশ্বাসী ঋণের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এর অপব্যবহার হয়েছে। ঠিকমতো নিয়ম-নীতি মেনে সবকিছু করলে অনিয়ম হতো না।
সোনালী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, সোনালী ব্যাংক দেশের আপামর জনসাধারণের ব্যাংক। এই জনসাধারণের স্বার্থরক্ষায় আমরা কাজ করে যাবো। সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করে ব্যবসা করবো। ব্যাংকের সেবার মান বাড়াবো এবং শ্রেণিকৃত ঋণ কমিয়ে আনবো। সেই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক আমানতকারীর আস্থা রক্ষা করে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চেষ্টা করবো। পাশাপাশি কর্মকর্তা কর্মচারিদের স্বার্থে বেশি মুনাফা করারও চেষ্টা করবো।
গ্রাহকের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক বড় ব্যাংক। তাই গ্রাহকের অভিযোগ বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে কৃষক, শ্রমিক, গার্মেন্টকর্মী, বিধবা ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাংকহিসাব খোলার সেবা দিচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে স্কুল ব্যাংকহিসাব বেসরকারি ব্যাংকগুলোও খুলেছে। তবে বাকি ব্যাংক-হিসাবগুলো সরকারি ব্যাংকই খুলছে। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে প্রায় দেড় কোটি ব্যাংকহিসাব খোলা হয়েছে। এসবের মধ্যে শুধু সোনালী ব্যাংকেই প্রায় ৪০ লাখের মতো হিসাব রয়েছে।
ট্রেজারি চালান ভাঙ্গানোসহ সোনালী ব্যাংক ৩৭টি কাজ করে। এর মধ্যে ২৪টি কাজ করা হয় কোনো প্রকার কমিশন ছাড়াই নিখরচায়। জনতা, অগ্রণী ব্যাংকের তুলনায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ও কাজের পরিধি বেশি। কিন্তু তুলনামুলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তাদের তুলনায় আমাদের লোকবল কম। সোনালী ব্যাংকের কিছু শাখা আছে যেখানে গ্রাহকের ভিড়ে ভিতরে ঢোকাই যাই না।
লোকবল কম থাকা এবং গ্রাহকের সংখ্যা বেশি, তাই অভিযোগও কিছু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটি যাতে না হয় সেজন্য আমরা সেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছি। আমরা বিশ্বাস করি বিগত বছরের তুলনায় আমাদের সেবার মান অন্যসব ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা ভালোর দিকে।
প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক। এটি শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংক নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সোনালী ব্যাংক দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে থাকে। সরকারের বিভিন্ন স্কিমও সোনালী ব্যাংক বাস্তবায়ন করে থাকে। বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাংকের চেয়ে সোনালী ব্যাংকের নেটওয়ার্ক বড়। সোনালী ব্যাংকের ১২০০টি শাখা রয়েছে।
আমরা অবস্থাগত কারণে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম। তবে এখন অতটা পিছনে নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ১হাজার ১৮২টি শাখা অনলাইন করেছি। ফলে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা লেনদেন করার সুযোগ হয়েছে। রিয়েল টাইম অনলাইন সেবা চালুর জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
রিয়েল টাইম অনলাইনের জন্য ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১১৫টি শাখার টার্গেট দিয়েছিলাম। সেখানে ১২০টি শাখায় রিয়েল টাইম অনলাইন চালু করা হয়েছে। এ-বছর (২০১৫ সাল) আরো ৩৮০টি শাখায় রিয়েল টাইম অনলাইন চালু করবো। এতে ৫০০টি ব্রাঞ্চে রিয়েল টাইম অনলাইন চালু হবে। বাকি ৭০০টি শাখায় ২০১৬ সালের মধ্যে রিয়েল টাইম অনলাইন চালু করা হবে। এর মাধ্যমে সব ধরনের কাজ অনলাইনে করা যাবে।
সোনালী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্য ব্যাংকের তুলনায় সোনালী ব্যাংকের এক্সপোজার অনেক বেশি। ডিপোজিটের (আমানত) পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। গত বছর পরিচালন আয় (অপারেটিং প্রফিট) ছিলো মাত্র ২৯৭ কোটি টাকা। এ-বছর তা বেড়ে ৮৫৪ কোটি টাকার (প্রভিশনাল হিসাব) মতো হয়েছে। গত বছরের তুলনায় শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণও কমেছে। সার্বিকভাবে ব্যাংকের অবস্থা বেশ ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫