ঢাকা: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সিনিয়র নাগরিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ‘সিটিজেন কাউন্সিল’ গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) মতিঝিলের ডিসিসিআই কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেন সংগঠনটির সভাপতি হোসেন খালেদ।
হোসেন খালেদ বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত ‘সিটিজেন কাউন্সিলের’ সদস্যরা কোনোভাবেই রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হবেন না।
তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তথা স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে সবার শাসনতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখা। ডিসিসিআই মনে করে যেকোনো পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে রাজনৈতিক দলগুলোকেই তা নিরসনে অবশ্যই কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে। যাতে রাজনীতির কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই নেত্রীকে সংলাপে বসানোর জন্য ডিসিসিআই’র পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি-না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংকট নিরসনে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে যা করা দরকার, আমরা সবই করবো। তাছাড়া সংলাপের জন্য দুই নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে একপায়ে দাঁড়িয়ে আছি। যদি আমাদের সুযোগ দেওয়া হয় তবে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।
ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, শুধুমাত্র বর্তমানের সমস্যা সমাধানের পথ বের করলেই চলবে না। যে কোনো রাজনৈতিক সংকট এমনভাবে সমাধান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে একই ধরনের সংকট তৈরির আর কোনো সুযোগ না থাকে। আমরা মনে করি সুষ্ঠু ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সহজ হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপই একমাত্র পন্থা। পৃথিবীর কোনো দেশেই চাপ বা শক্তি প্রয়োগ করে কাঙ্ক্ষিত সমাধান অর্জন সম্ভব হয়নি। তাই আমাদের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে অবিলম্বে সংলাপ আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে। পেশী শক্তির পরিবর্তে মেধা ও বুৎপত্তির সমন্বয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সব সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে হবে।
সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা বজায় রাখার লক্ষ্যে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক দলগুলোকে পারস্পারিক সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক ইস্যুতে ঐক্যমত সৃষ্টি করে রাজনীতিকে একটি দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোতে নিয়ে যেতে হবে। অবরোধ-হরতাল দেশ ও জনগণের ক্ষতি ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিতে পারে না। তাছাড়া যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলকেই সব অর্থনৈতিক ক্ষতির বোঝা বহন করতে হয় বলে মত প্রকাশ করেন হোসেন খালেদ।
তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু সরকার পিডিবির পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। যেখানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে, সেখানে বাংলাদেশে এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম পুনরায় বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়া দেশে জ্বালানি তেলের দামও কমে আসা উচিত, যা আমাদের কৃষি ও পরিবহন খাতে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনবে।
তিনি আরো বলেন, চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে যেখানে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়টি বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এক্ষেত্রে এফডিআই’র বেলায় যেখানে আমরা এমনিতেই পিছিয়ে আছি।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫