ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোবাইল ব্যাংকিং

গ্রাহকের ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে বাড়ছে লেনদেন

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
গ্রাহকের ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে বাড়ছে লেনদেন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ও আর্থিক লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাহকের নিজস্ব ওয়ালেট (একাউন্ট) থেকে অর্থ আদান-প্রদানের প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এই সেবা হয়ে উঠছে আরও পরিণত ও শক্তিশালী বলে মত মোবাইলে ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের।

 

বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং কেবল টাকা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং অনেক নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়েছে এতে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের এয়ারটাইম ক্রয়ের পাশাপাশি দোকানে কেনাকাটাসহ নানা ধরনের কাজ করা যাচ্ছে।

এছাড়া ওয়ালেটে জমা টাকার ওপর দেওয়া হচ্ছে ইন্টারেস্ট। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে ওয়ালেট ব্যাবহারের উৎসাহ বেড়েছে।

এছাড়াও মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে ই-কমার্সসহ নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা। তাই এ খাতের বিকাশে কোনো ধরনের বাধা তৈরি হলে, তা এই ইকোসিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও মত তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এসে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে গ্রাহক বৃদ্ধির হার ৯০ ভাগেরও বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন দেশে লেনদেন হচ্ছে ৩ শ’ ৫০ কোটি টাকার মতো। যার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর গ্রাহক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

অন্যদিকে, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকেরও রয়েছে কড়া নজরদারি। যাতে কোনো অসাধু শক্তি বা চক্র দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া এই সেবার অপব্যবহার করতে না পারে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। এরমধ্যে- গ্রাহকের ওয়ালেট থেকে দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া। একজন গ্রাহককে একটি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী ব্যাংক বা সাবসিডিয়ারির একটার বেশি অ্যাকাউন্ট খুলতে না দেওয়া, অ্যাকাউন্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় না করে যাচাই-বাছাই করার পর সক্রিয় করা এবং অ্যান্টি মানিলন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফিনান্সিং অব টেররিজম অ্যাক্টের আওতায় সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে যে কয়টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে তারা নির্ধারিত নিয়ম মেনেই এই সেবা দিয়ে আসছে। আর তা দেখভালের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বদা তৎপর রয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট কাজ করছে। আমি দাবি করে বলতে পারি, বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৯৯ ভাগই শুদ্ধ। কোনো গাফিলতি এখানে হচ্ছে না।

আমাদের দেশের মোবাইল ব্যাংকিংকে অনুসরণীয় আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ওদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জন্য বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং একটি অনুকরণীয়-অনুসরণীয় বিষয়। আমরা এই সেক্টরে যে গতি ও শুদ্ধ ধারাবাহিকতা নিয়ে এগিয়েছি তা বিশ্বের যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্যই আদর্শ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও তাদের প্রতিনিধিরা আমাদের কাছে জানতে চায় আমরা কিভাবে এতোটা নিময়নীতি মেনে এই সেক্টরকে দাঁড় করাতে বা প্রতিষ্ঠা করাতে পারলাম। আর তার কারণ একটাই বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম অনেক সামনের দিকে আছে।

আসাদুজ্জামান বলেন, এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম যাতে পরিচালিত হতে না পারে, সে জন্য কঠোর মনিটরিং, অনৈতিক কাজের জন্য যাতে অর্থ প্রেরণ না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া, জবাবদিহিতা বিধান, দুর্নীতিমুক্ত লেনদেন ও মানিলন্ডারিং যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখাসহ নানা কর্মকাণ্ড বিষয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকই নয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও এ ব্যাপারে তৎপর। এছাড়া যেসব ব্যাংক এই সেবা দিয়ে আসছে তাদেরও বলা হয়েছে প্রাথমিক মনিটরিংয়ের কাজ সম্পাদন করতে। এতে যে কোনো অনিয়ম রোধ খুব দ্রুত তৃণমূল থেকেই করা সম্ভব হচ্ছে। তাদেরও সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ৫ বছর আগে আমি কখনও মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ে ভাবিনি। ২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর মোবাইল ব্যাংকিং দেশে এতোটাই সমাদৃত হয়েছে যে মানুষের মুখে মুখে এখন এই সেবার প্রশংসা। সরকারের যে উদ্যোগ সকলের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া, তা অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে। ব্যাংকিং সেবা কী জিনিস যেসব প্রান্তিক মানুষ বুঝতো না, তারা এখন মোবাইল ব্যাংকিং বললেই নিজেদের অর্থনৈতিক লেনদেন বোঝেন। যা আমাদের একটি বড় অর্জন।

ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়। যাদের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

দেশে এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই কোটির গণ্ডি ছুঁয়েছে। অর্থ আদান-প্রদানের পাশাপাশি নতুন নতুন সেবা চালুসহ নিরাপদ ও বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে দেশে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।