ঢাকা: বর্তমান সরকারের মেয়াদের বাকি চার বছরে দেশে দারিদ্রের হার আরও ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তার সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় গত ছয় বছরে দারিদ্রের হার ২৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমান মেয়াদে আরও চার বছর কাজ করলে দারিদ্রের হার আরও ১০ শতাংশ কমে ১৪ শতাংশে দাঁড়াবে। অতি দরিদ্র মানুষের হার কমিয়ে ১১ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী চার বছরে তা আরও কমে যাবে বলেই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন মন্ত্রণালয়ের অধীনের চারটি বিভাগ- অর্থ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের চার সচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রাস্ফিতি হ্রাস, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে অর্থমন্ত্রণালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রমের ফসল বলে উল্লেখ করেন। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রজ্ঞা ও দক্ষতা এবং তার নিরলস কাজ করে যাওয়ার ক্ষমতারও ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সকলের নিরলস শ্রমেই বিএনপি-জামায়াতের রেখে যাওয়া অনেকটা বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আজ ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমেছে। উন্নয়নের ফসল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
দেশের ভেতরেই বাজার সৃষ্টি করে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো তার সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে যার মাধ্যমেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি, সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সরকারকে নিতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক দূরদর্শিতার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত এই পরিকল্পনা বাতিল করে, অ্যাডহক ভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে দেশের অর্থনীতিকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিলো। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তার সরকার ৬ষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা নেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতেও তার সরকারের উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খাদ্য মজুদ আধুনিকতর করতে তার সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মাধ্যমে দুই-তিন বছর পর্যন্ত খাদ্য মজুদ করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আর পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো না। ভিক্ষুকের জাতি হয়ে থাকবো না।
শেখ হাসিনা বলেন, তার দল আওয়ামী লীগ সরকারের বাইরে থাকলেও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে ভাবে। বিরোধী দলে থেকেও দলের অর্থবিষয়ক উপ-কমিটি সক্রিয় থেকে দল সরকারে গেলে কিভাবে উন্নয়ন করবে তারই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান অর্থমন্ত্রী তখন ওই কমিটির প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগকে উন্নয়নের পথে প্রস্তুত করেছিলেন।
অথচ বর্তমানে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থেকে অর্থনীতির ওপরই আঘাত হানছে। বোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে এতে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বলেন শেখ হাসিনা।
তবে দেশের মানুষ আজ সচেতন। তারা জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা মেনে নেবে না এমন মত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনরোষেই প্রতিহত হবে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মারা মানবাধিকারবিরোধী কাজ। এ কাজ ইসলামবিরোধীও।
তিনি বলেন, যে দল দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, যে দল সামরিক শক্তির অপব্যহারের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত তাদের পক্ষেই সম্ভব এভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও সাধারণ মানুষের ধন-সম্পদ ধ্বংস করা।
এরা দেশের জন্য কোনও উন্নয়ন না করে, মুফতে পেয়ে গেছে। আর সে কারণেই দেশের ধ্বংস হলে তাদের কিছু যায় আসে না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আগে থেকেই দক্ষ। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। শত প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবো।
বাংলাদেশ সময় ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫