ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রাণহীন কাঁচাবাজার

ইমরান ‍আলী ও আবু খালিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫
প্রাণহীন কাঁচাবাজার ছবি : দেলোয়ার হোসেন বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন প্রাণ ফিরে পায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো। ব্যতিক্রম নয় যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারও।

মধ্যরাতে জমে ক্রেতা, বিক্রেতা, পাইকারদের মেলা। বাজারে ঠাঁই মেলে না পা ফেলার। সারারাত বিকিকিনির কোলাহলে মেতে থ‍াকে পুরো কাঁচাবাজার।
 
প্রতিবছর পৌষে এরকম চিত্রের দেখা মেলে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে। কিন্তু এবছর চিত্র একেবারে ভিন্ন। রাতে দেখে বোঝার উপায় নেই যে রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার এটি।

২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ আর হরতালের ফাঁদে পড়ে যেন প্রাণই হারিয়ে ফেলেছে বাজারটি। পাইকার আর পণ্য সরবরাহের স্বল্পতায় প্রতিদিনই পণ্যের দাম ওঠানামা করছে। আর্থিক ক্ষতি আর ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আড়তদার, পাইকার, বিক্রেতা, শ্রমিক ভালো নেই কেউ-ই।   

শনিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতজুড়ে বাংলানিউজের সরেজমিনে উঠে আসে এ চিত্র।
 
রাত ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী হাইওয়ে সড়কের পাশের কাঁচাবাজারে ঢুকতেই দেখা গেলো মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আলু ও ফুলকপি ব্যবসায়ী মনির হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এতে ঝুঁকি নিয়ে পণ্য এনে বিক্রি করতে হচ্ছে ক্ষতিতে। শুক্রবার ট্রাকে ফুলকপি আর আলু বোঝাই করে সুযোগ বুঝে শনিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন চালক। কিন্তু বগুড়া থেকে একদিন দেরিতে ট্রাক আসায় দুই হাজার পিস কপি নষ্ট হয়ে গেছে।
 
শুধু খুচরা বিক্রেতাদের কোনো ক্ষতি নেই- এরকম কথা প্রায় সবার কাছে শোনা গেলো বাজার ঘুরে। গৌরিপুর থেকে আসা খুচরা বিক্রেতা আল আমিন জানান, প্রতিদিনই যে লাভ হয় এটা ঠিক নয়। খুচরা বিক্রি করতে গিয়ে ওজনও কমে যায়। আর লাভ না হলে খাবো কী! যারা হরতাল অবরোধ ডেকেছে তারা তো খাবার দেবে না।
 
হরতালের আগুনে কাঁচাবাজারের আড়তদাররা পুড়ছেন বলে জানালেন মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়ের আড়তদার আব্দুর রউফ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রায় ২০ বছরের মধ্যে আড়তদারের ব্যবসায় বর্তমান সময়ের মতো এমন দুঃসময় আর কোনোদিন আসেনি।
 
মানিকগঞ্জ থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপি আনা আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি ১ হাজার ২৫টি বাঁধাকপি ও ১ হাজার ২শ’ ৭৫টি ফুলকপি এনেছেন। প্রতিটি বাঁধাকপি ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা আর ফুলকপি ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করবেন। কিন্তু পাইকারের অভাবে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে পাইকাররা যেদিন বেশি আসেন সেদিন দাম ভালো ওঠে। আর পাইকাররা না এলে দাম এমনই কমে যায়।
 
ব্যাপারী রশিদ, আব্দুল জলিল, সুরুজ মিয়া জানালেন বর্তমানে টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পাল্লা (প্রতি ৫ কেজি) দরে বিক্রি হচ্ছে।
 
এদিকে ব্যাপারীদের কথার সঙ্গে পাইকারদের পণ্যের দাম নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেলেও বাজারে পাইকাররা কম আসছেন এ বিষয়টির সঙ্গে সবাই একমত প্রকাশ করেন।
 
অবরোধ আর হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দিনমজুরেরা। এ বিষয়ে দিনমজুর শাহিনুর রহমান বলেন, আমরা সারারাত কাজ করে যা আয় করি সেটা দিয়ে বাজার করে খাই। যদি কাজ না পাই তাহলে বাজার করবো কী করে? প্রায় হাজার খানেক শ্রমিক কাজ করেন এখানে। সবার আয় অর্ধেকের নীচে নেমে এসেছে।
 
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মান ভেদে প্রতিকেজি আলু (লাল) ৭ থেকে ১০ টাকা, ডায়মন্ড ৮ থেকে ১২ টাকা, সিম ১৬ থেকে ২০ টাকা, গাজর ১০ থেকে ১৩ টাকা, শালগম ১৬ টাকা, শসা ২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা, বেগুন ১৮ থেকে ২২ টাকা, কাঁচামরিচ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।