ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এক’শ টাকার জন্য ব্যয় ৩১৩ টাকা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
এক’শ টাকার জন্য ব্যয় ৩১৩ টাকা

ঢাকা: আইন লঙ্ঘন করে বিমা গ্রাহকের টাকা ইচ্ছেমত খরচ করছে নতুন ব্যবসা শুরু করা জীবন বিমা কোম্পানিগুলো। এক’শ টাকার আয় করতে একাধিক কোম্পানি আড়াই’শ থেকে ৩১৩ টাকা পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে।


 
অথচ আইন অনুযায়ী ব্যবসা শুরুর প্রথম বছরে কোম্পানি আয়ের সাড়ে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আয় করলে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাবদ খরচ করা যাবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯৭ টাকা। ১৯৫৮ সালের বিমা বিধির ৩৯ ধারায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের এ নিয়ম বেধে দেওয়া হয়েছে।
 
নতুন ব্যবসা শুরু করা ১৩টি জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে একটি কোম্পানি আইনিসীমার মধ্যে ব্যয় করেছে। ১১টি প্রতিষ্ঠান আইনিসীমা লঙ্ঘন করে ২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত ব্যয় করা টাকার ৯০ শতাংশই গ্রাহকরা প্রাপ্য। বাকি একটি একটি কোম্পানির তথ্য পাওয়া যায়নি।   
 
কোম্পানিগুলোর ২০১৪ সাল শেষে তৈরি করা আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ অস্বাভাবিক ব্যয়ের চিত্র্র পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র (আইডিআরএ) কাছে এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কোম্পানিগুলো।
 
জানতে চাইলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নতুন ব্যবসা শুরু করা কোম্পানিগুলো যে আয় করেছে কিছুতেই তার অতিরিক্ত ব্যয় করতে পারে না। যেসব কোম্পানি অস্বাভাবিক ব্যয় করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুরাতন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) বলেন, নতুন কোম্পানিগুলো এভাবে ব্যয় করতে থাকলে গ্রাহকের টাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। এমনকি কোম্পানির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
 
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সব থেকে খারাপ অবস্থানে রয়েছে স্বদেশ লাইফ। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে আয় করেছে ৯২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক’শ টাকা আয় করতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করছে ৩১৩ টাকা।
 
অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে স্বদেশ লাইফের চেয়ারম্যান নুরুল আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অফিস নেওয়া ও গাড়ি কেনাসহ কিছু স্থায়ী খাতে বিনিয়োগ করেছি। যে কারণে ব্যবসার শুরুতে খরচ কিছুটা বেড়েছে। পরবর্তীতে এ অংক কমিয়ে আনা হবে।
 
আইনিসীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
 
এরপর প্রতিষ্ঠানটির এমডি দিপেন কুমার সাহা রায় বলেন, আইন লঙ্ঘন হয়েছে এটি সত্য। এ লঙ্ঘনের জন্য আইডিআরএ যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে আমরা তা মেনে নিবো।
 
অতিরিক্ত খরচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আলফা লাইফ। প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ আয়ের জন্য ব্যয় করেছে ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক’শ টাকা আয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় ২৭৯ টাকার উপরে।
 
এক’শ টাকা আয়ের জন্য দুই’শ টাকার উপরে খরচ করেছে এমন কোম্পানির তালিকায় রয়েছে চার্টার্ড লাইফও। প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় করেছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এক’শ টাকার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হয়েছে ২৩৮ টাকার উপরে।
 
জানতে চাইলে চাটার্ড লাইফে এমডি পদে চলতি দায়িত্বে থাকা বিপুল চন্দ্র নাথ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসা শুরুর প্রথম বছর হওয়ায় আইনিসীমার অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। তবে এখন আমরা অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছি। আশা করি সামনে আর আইন লঙ্ঘন হবে না।
 
বেস্ট লাইফ এক’শ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে ১৪৭ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় করেছে ১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
 
প্রটেক্টিভ লাইফ ৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় আয়ের ১৬২ শতাংশ। জেনিথ ইসলামী লাইফ ৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে ১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ব্যয় আয়ের ১৩১ শতাংশ।
 
যমুনা লাইফ ব্যয় করেছে আয়ের ১২৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির আয় হয়েছে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গার্ডিয়ান লাইফ ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আয় করে ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ব্যয় আয়ের ১১০ শতাংশ।
 
মার্কেন্টাইল লাইফ ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় করেছে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ব্যয় আয়ের ১১৭ শতাংশ। এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। ব্যয় আয়ের ১৩৭ শতাংশ।
 
একমাত্র সোনালী লাইফ আইনিসীমার মধ্যে ব্যয় করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এক’শ টাকা আয় করতে ব্যয় করেছে সাড়ে ৪৪ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট আয় ১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

সোনালী লাইফের এমডি অজিত চন্দ্র আইচ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবস্থাপনা পর্ষদের অদক্ষতা এবং মালিক ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ।
 
তিনি বলেন, আইডিআরএ’র উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ-কে শুধু মতিঝিলে(কার্যালয়ে) বসে থাকলে চলবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।