ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাকখাত নিয়ে জারা এমডি

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জার্মান ক্রেতারা

ঊর্মি মাহবুব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫
মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জার্মান ক্রেতারা এস এম মেহেদী হাসান রানা/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকাঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মোট রফতানির ৪০ শতাংশই হয় জার্মানিতে। আর বর্তমান চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় জার্মানির আলদি, নিউ ইয়রকার, গোল্ডেন পেনিসহ সব ক্রেতারাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশে তো আসছেই না, যা অর্ডার দেয়ার কথা তাও তুলে নিচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।

এমনটাই জানিয়েছেন জারা জিনস অ্যান্ড নিটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক ও জারা ফ্যাশন জিনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মেহেদী হাসান রানা।

সোমবার(১৬ ফেব্রুয়ারি’২০১৫)কোম্পানিটির মিরপুরের কারখানা কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের এখন জার্মান ক্রেতাদের সাথে আলোচনা করতে যেতে হচ্ছে থাইল্যান্ড, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে। জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এসে আলোচনার মাধ্যমে জারা গ্রুপকে জার্মান ক্রেতা আলদির প্রায় ১০ লাখ ডলারের কাজ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশে আসেনি আলদি।
আলদির সাথে বৈঠক করতে জারা গ্রুপের কর্মকর্তাদের যেতে হয়েছে থাইল্যান্ড। যেখানে ১০ লাখ ডলারের অর্ডার দেয়ার কথা সেখানে দিয়েছে মাত্র ২ লাখ ডলারের কাজ।

তিনি আরও বলেন, জার্মানির অপর ক্রেতা নিউ ইয়রকার মেইলের মাধ্যমে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সিচ্যুয়েশন ইজ নট গুড। আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় ইচ্ছে থাকলেও অর্ডার দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছে নিউ ইয়রকার। জার্মানির অনেক ক্রেতাই এখন স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, উই আর হ্যাপি ইন পাকিস্তান অ্যান্ড ইন্ডিয়া।

অ্যাকর্ড, এলায়েন্সের চাহিদা মতো কারখানা প্রস্তুত করে চলতি বছরে যেখানে পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের সাথে দর কষাকষির কথা ছিলো সেখানে এখন মাথা নিচু করে কেবলমাত্র অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তা ক্রেতা যে দামই দিক না কেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে পণ্য সামগ্রী নিজেদের খরচে এয়ার শিপমেন্ট করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জারা গ্রুপকে জানুয়ারি মাসের অবরোধের কারণে প্রায় দেড় লাখ ডলার ব্যয় করতে হয়েছে এয়ার শিপমেন্টের কারণে। আমরা বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করে থাকি। কিন্তু বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে তা ৬০ শতাংশই কমে যেতে পারে। কমপ্লায়েন্সের জন্য আমরা যে ব্যয় করেছি তাই তুলে আনা যাবে না।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালে যেসব জার্মান বিনিয়োগকারীর বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার কথা ছিলো তারাও  পরিকল্পনা পরবর্তন করছে। জারা গ্রুপের সাথে গোল্ডেন পেনি নামক জার্মান বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করার কথা ছিলো। বৈঠক হয়েছিলো জার্মানির কিউকেন বার্গে। তা আর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পোশাক শিল্পের এই উদ্যোক্তারা।

তিনি বলেন, আমাদের গোল্ডেন পেনির সাথে যৌথভাবে একটি কারখানা করার কথা ছিলো। তারা বিনিয়োগ করবে বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও দিয়েছিলো। কিন্তু রাজনীতিক পরিস্থিতিতে এ দেশে ব্যবসা করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পারছে বিনিয়োগকারীরা। তারা আসছেন না।  

২৩ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সাফল্য এখন হুমকির মুখে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন মেহেদী হাসান রানা। বলেন, সেই ২৩ বছর আগে এই খাতে কাজ শুরু করি। তারপর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন তা হুমকির মুখে।

এমনকি গত মাসের শ্রমিকদের বেতন এ মাসে ব্যাংক লোন করে পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক আর কতো লোন দিবে।

রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে দেশের গার্মেন্ট খাতকে বাইরে রাখা উচিত।

ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতাই চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি কোনো না কোনো সময়তো ঠিক হবেই কিন্তু যেসব ক্রেতা পাকিস্তান, ভারত ভিয়েতনাম, চীনে চলে যাচ্ছে তাদের ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। এর দায় রাজনীতিবিদরা কখনোই নেবেন না। যদি দায় নিতে না পারেন তাহলে কেন আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করছেন। দয়া করে আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করবেন না।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।