ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লোকসানের মুখে আবাসিক হোটেল ব্যবসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫
লোকসানের মুখে আবাসিক হোটেল ব্যবসা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: একদিকে কমেছে অতিথিদের আগমন, অন্যদিকে কর্মচারীদের বেতন আর নিয়মিত আনুষাঙ্গিক খরচ। সব মিলিয়ে ২০ দলের টানা ৪৭ দিনের অবরোধ (২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) এবং হরতালের কারণে লোকসানে পড়েছেন রাজধানীর হোটেল ব্যবসায়ীরা।



ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেসব অতিথি হোটেলে আসছেন তারা এক রাত থেকে অথবা দিনের কাজ দিনে সেরেই বাড়ির পথ ধরছেন। তবে প্রতিদিন হোটেলগুলোর ব্যয় বেড়েই চলছে। এর উপর কর্মচারীদের বেতন। এসব নিয়ে বেশ লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

১০৬ রুম বিশিষ্ট রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুরের আরজু হোটেল। সারাবছর গড়ে ৭০-৭৫ টি রুম ভাড়া থাকলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০-এ।

হোটেলে অবস্থানরত মাহমুদুর রহমান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের কাজে প্রতিমাসে তাকে ১২-১৫ দিন ঢাকার হোটেলে থাকতে হয়। তবে হরতালের কারণে এ মাসে তিনবার সকালের ট্রেনে ঢাকায় এসে রাতের ট্রেনে ফিরে গিয়েছেন তিনি।

শুধু মাহমুদই নয়, তার মতো অনেকেই রাজধানীতে না থেকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে হোটেল ম্যানেজার সাইফুদ্দিন খোকা জানান, প্রতিদিন হোটেলটির আনুষাঙ্গিক খরচ ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।

চলমান এই পরিস্থিতে দিনের খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরমধ্যে খরচ কমাতে চলতি মাসে তিনজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

‘রুম ভাড়া না হলেও প্রতিদিন লিফট, বিদ্যুৎ, পানি ও সার্ভিসিং খরচ দিতে হচ্ছে। লাভ তো দ‍ূরের কথা আগামী দু-এক সপ্তাহ এমন চললে লোকসান গুনতে হবে আমাদের’—বলেন তিনি।

মগবাজারের তাজুল হোটেলের ৩৬ টি রুমের প্রায় ২৫ টিই এখন খালি পড়ে আছে। সরকারি নির্দেশে গত একবছর থেকে অতিথির জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন ধরনের চিহ্নিতকরণ তথ্য নেওয়া নিয়ে রুম দেওয়া হয় হোটেলগুলোতে।

এই নিয়ম-নীতির কারণে এমনিতেই কমেছে হোটেলে অতিথিদের সংখ্যা। এর ওপর আবার হরতাল-অবরোধ।

৭৫ শতাংশ রুম খালি রয়েছে বংশালের বায়তুস সামীর ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গড়ে প্রায় সব হোটেলের কমপক্ষে ৬০ শতাংশের মতো রুম খালি পড়ে আছে।  
 
হোটেল ব্যবসায় মন্দার কারণে কর্মরত কর্মচারীদের সঠিক সময়ে বেতন দিতেও পারছেন না হোটেল মালিকরা। অনেক হোটেলের লোকজন ‘মাসের বেতন মাসে দেওয়া হয়’ দাবি করলেও কর্মচারীরা বললেন ভিন্ন কথা।

মগবাজারের তাজুল হোটেলের স্টাফ রতন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ডিসেম্বরের বেতন পেয়েছি জানুয়ারির ১৭ তারিখে আর জানুয়ারিরটা ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে। ’

এমত‍াবস্থায় রাজধানীতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য রাজধানীতে ছোট বড় প্রায় ২০০ এর বেশী অনুমোদনপ্রাপ্ত (জেলা প্রশাসক কর্তৃক) আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলোর অবস্থাও একই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর গুলিস্থান, পল্টন, মহাখালী, ফার্মগেট, মগবাজার এলাকার সিংহভাগ রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে হোটেল ব্যবসায়কে কেন্দ্র করে।
ফার্মগেটের লাভলী রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জাকারিয়া আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, হোটেলে অবস্থানরত প্রায় সব অতিথি ৩ বেলা রেস্টুরেন্টে খাওয়া-ধাওয়া করেন। কিন্তু হোটেলগুলোতে অতিথি কমে যাওয়ায় কাস্টমারের সংখ্যাও কমে গেছে।

বাইরের অনুষ্ঠানগুলোতেও সেভাবে পার্সেলের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।