ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

তবু অফিস করছেন তারা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
তবু অফিস করছেন তারা

ঢাকা: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা লঙ্ঘন করে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী, পদ্মা ইসলামী লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে অনিয়ম চলছে।
 
কোম্পানিগুলোতে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করছেন অমর কৃষ্ণ শাহ, আতাউর রহমান মজুমদার, ওয়াসি উদ্দিন চৌধুরী, আজিজুল ইসলাম তালুকদার, আব্দুর রফিক ও মোশারফ হোসেন।


 
এদের কাউকে সিইও পদের জন্য অনুমোদন দেয়নি আইডিআরএ। অথচ সিইও হিসেবে নিয়মিত অফিস করছেন এবং বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা নিচ্ছেন এই ৬ ব্যক্তি।
 
আইডিআরএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী, আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া সিইও পদে দায়িত্ব পালন করা যাবে না। কোম্পানি থেকে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধাও নেওয়া যাবে না। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ নির্দেশনা জারি করে আইডিআরএ।
 
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তির মুখ্য নির্বাহী পদে যোগদান করা বিমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারা এবং বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধান ২০১২ এর লঙ্ঘন। কাজেই অনুমোদন পাওয়ার আগে কোন ব্যক্তি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন বা বেতন ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন না।
 
জানতে চাইলে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া দায়িত্ব পালন করা অবৈধ। কেউ অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
নির্দেশনা লঙ্ঘন করে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সে দায়িত্ব পালন করছেন আতাউর রহমান মজুমদার। এই বিমা ব্যক্তি প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স’র সিইও পদে যোগদেন ২০০৮ সালে। এর আগে তিনি কোন বিমা কোম্পানিতে কাজ করেননি।
 
অধুনালুপ্ত বিমা অধিদপ্তরের কন্ট্রোলার থেকে সরাসরি প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স’র সিইও পদে যোগদান করেন। আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ পাসের পর নতুন করে অনুমোদন না নিয়েই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
 
অথচ আইন অনুযায়ী এমডি পদে নিয়োগ পেতে হলে বিমা কোম্পানিতে কমপক্ষে ১৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ বিষয়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা-২০১২ তে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানির এমডি পদে নিয়োগ পেতে একই শ্রেণির বিমা কোম্পানিতে ১৫ বছরে চাকরির অভিজ্ঞতাসহ এমডির অব্যবহিত নিম্নপদে তিন বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
 
হোমল্যান্ড লাইফে দুই বছর ধরে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করছেন আজিজুল ইসলাম তালুকদার। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে আইডিআরএ গত দুই বছরেও তাকে সিইও হিসেবে অনুমোদন দেয়নি।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হোমল্যান্ড লাইফে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে আজিজুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আইডিআরএ’র প্রজ্ঞাপন আমরা পেয়েছি। ভেবে দেখছি এ বিষয়ে কি করা যায়।
 
আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়াই ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সে দায়িত্ব পালন করছেন এসকে আব্দুর রফিক। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স’র সিইও’র পাশাপাশি জীবন বিমা কর্পোরেশনের পরিচালক পদেও রয়েছেন। অথচ আইন অনুযায়ী কোন বিমা কোম্পানির সিইও অন্য কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে পারেন না। এ ছাড়া এই বিমা ব্যক্তির সিইওর অব্যবহিত নিম্নপদে অর্থাৎ বিমা কোম্পানিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে তিন বছরের চাকরি করার অভিজ্ঞতা নেই।
 
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স’র সিইও পদে আব্দুর রফিক যোগ দেন ২০১২ সালের জুন মাসে। এর আগে তিনি ২০০৯ সালে নর্দান ইন্স্যুরেন্সে সিনিয়র ইভিপি ছিলেন। নার্দানে থাকাকালীনই তিনি জীবন বিমা কর্পোরেশনের পরিচালক নির্বাচিত হন।
 
বিমা আইনে এমডিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ৩ বছরের স্নাতক ও এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি রাখা হয়েছে। অথচ শুধু বিএ পাশ করেই স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স দীর্ঘদিন ধরে সিইও পদে দায়িত্ব পালন করছেন অমর কৃষ্ণ শাহ। এমনকি সিইও পদে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র অনুমোদন নেই তার।
 
বিষয়টি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় অমর কৃষ্ণ শাহ’র মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করে কথা না বলে চুপ করে থাকেন। এক পর্যায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আবার ফোন দিলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।
 
২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকেই নিয়মিত এমডি শূন্য গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে মোশারফ হোসেন সিইও পদে চলতি দায়িত্ব (সিসি) পালন করছেন। তবে বিমা আইনে সিইও পদে সিসি নিয়োগের কোন বিধান নেই। এছাড়া আইন অনুযায়ী ৩ মাসের বেশি এমডি পদ খালি রাখার বিধান নেই।
 
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে সিইও পদে দায়িত্ব পালন করছেন মো. খালেদ মামুন। তিনি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করেন। তবে কোন বিমা কোম্পানিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ৩ বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা নেই তার।
 
আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়াই এশিয়া ইন্স্যুরেন্সে সিইও পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন বিদুভূষণ চক্রবর্তী। অনিয়মের অভিযোগে ২০১১ সালে সাধারণ বিমা কর্পোরেশন থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন এই বিমা ব্যক্তি।
 
পদ্মা ইসলামী লাইফে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ওয়াসি উদ্দিন চৌধুরী। গত ৯ মাস ধরে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি কোম্পানিটিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। সিইও পদের যোগ্যতার শর্তপূরণ না করায় তাকে অনুমোদন দেয়নি আইডিআরএ।
 
পদ্মা ইসলামী লাইফে সিসি পদে থাকা ওয়াসি উদ্দিন বলেন, আমরা নিয়মিত সিইও খুঁজছি। এ বিষয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি। কিন্তু যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে না পাওয়ায় এখনো পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমরা নিয়মিত আইডিআরএকে অবহিত করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।