ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘উন্নয়ন অন্বেষণ’এর গবেষণা

রাজস্ব ঘাটতি ৩৪০০০ কোটি টাকায়ও যেতে পারে

বিজনেস এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
রাজস্ব ঘাটতি ৩৪০০০ কোটি টাকায়ও যেতে পারে

ঢাকা: রাজস্ব আদায়ের সাথে লক্ষ্যমাত্রার পার্থক্যের ঐতিহাসিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে, বর্তমান অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ২৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঐতিহাসিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার সম্ভাব্য পার্থক্য ২৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে প্রায় ৩৪০০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে।



প্রতিষ্ঠানটির মাসিক ’বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’র ২০১৫ এর ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় এ আশঙ্কার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

একইভাবে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাজস্ব আদায়ের সাথে লক্ষ্যমাত্রার পার্থক্যের ঐতিহাসিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ দেখায় যে বর্তমান অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ২৬৭৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, যেখানে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ যথাক্রমে ১০৮৪৭ কোটি ও ২৫৮৫৬ কোটি টাকা ছিল।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৫৯০৬৩.৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করে যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১৪৯৭২০ কোটি টাকার ৩৯.৪৪ শতাংশ মাত্র। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৬৭৩৫৯ কোটি টাকা ছিল যার বিপরীতে প্রকৃত রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ১৪১৬০৩ কোটি টাকা ছিল, যেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৩৯৬৭০ কোটি টাকা ছিল যার বিপরীতে প্রকৃত রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ ১২৮১২৮ কোটি টাকা ছিল।  

অন্যদিকে, জাতীয় নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার অর্থবছরগুলোতে রাজস্ব আদায়ের সাথে লক্ষ্যমাত্রার পার্থক্যের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখায় যে, বর্তমান অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঐতিহাসিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে প্রাপ্ত বর্তমান অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সাথে লক্ষ্যমাত্রার সম্ভাব্য পার্থক্য ২৬হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে প্রায় ৩৪০০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে, যা বাজেট ঘাটতিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি’র) ৭ শতাংশে উন্নীত করতে পারে।

এতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিতার কারণে বর্তমান অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের সাথে লক্ষ্যমাত্রার যে পার্থক্য তা বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পাবে যা অর্থনীতিতে সরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে ব্যাহত করতে পারে।

জাতীয় নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতাপূর্ণ অর্থবছরগুলোতে রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখায় যে, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে(নির্বাচন ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী অর্থবছরের ১৬.৪২ শতাংশ থেকে কমে গিয়ে ১৫.৪ শতাংশ হয় এবং পরবর্তী অর্থবছরে ২১.৬৭ শতাংশে উন্নীত হয়।

একইভাবে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে (নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুন, ১৯৯৬) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী অর্থবছরের ১৫.৭১ শতাংশ থেকে কমে গিয়ে ৯.১৬ শতাংশ হয় এবং পরবর্তী অর্থবছরে ১০.৫২ শতাংশে পৌঁছে।
 
বর্তমান অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর সংগ্রহের ঘাটতির দিকে নির্দেশ করে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ দেখায় যে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই’১৪ - ডিসেম্বর’১৪ সময়ে মোট মূল্য সংযোজন কর আদায়ের পরিমাণ ১৪৬৮৩.৭ কোটি টাকা যা পুরো অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৭৮০.৪২ কোটি টাকার ৩৭.৮৬ শতাংশ, যা বছর শেষে আদায় এবং লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্যের ইঙ্গিত দেয়।

একই সময়ে আয়কর খাতে অর্থবছর শেষে আদায় এবং লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য হতে পারে যা এই অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বৃহৎ খাত বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রকৃত আয়কর সংগ্রহের পরিমাণ মোট লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বিপরীতে ১৮হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ৩৩.০৮ শতাংশ হয়েছে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের আমদানি শুল্কে ১৪৩৭৬.৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথমার্ধে ৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৮.৪৪ শতাংশ। তবে ’লেটার অব ক্রেডিট’ বাতিলের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছর শেষে আমদানি শুল্ক আদায়ের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জন নাও হতে পারে বলে আশংঙ্কা প্রকাশ করা হয়।  

বর্তমান অর্থবছরে এনবিআর বর্হিভূত রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও শ্লথগতি পরিলক্ষিত হয়। জুলাই’১৪-অক্টোবর’১৪ সময়ে এনবিআর বর্হিভূত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১৪০৭ কোটি টাকায় পৌঁছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ৫৫৭২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কর আদায়ের ঘাটতির অন্যতম কারণ হিসেবে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত ব্যবসা কার্যক্রমের স্থবিরতাকে উল্লেখ করেছে।

‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ দেখায় যে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে কর বর্হিভূত রাজস্ব আদায় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬.৫ শতাংশ কম হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কর বর্হিভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার বিপরীতে জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৭হাজার ২৭৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই সময়ে ১১ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ছিল।

রাজস্ব আদায়ে পার্শ্ববর্তী উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার দিকে নির্দেশ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখায় যে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত ৯.৭ শতাংশ ছিল যা প্রতিবেশী উন্নয়নশীল দেশ নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় যথাক্রমে ১৩.৯ ও ১২ শতাংশ ছিল।

’উন্নয়ন অন্বেষণ’ আশংঙ্কা প্রকাশ করছে যে, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীর গতিকে নির্দেশ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি দেখায় যে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জুলাই-জানুয়ারী সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয়ের পরিমাণ ২৭ হাজার ৩০৫ কেটি টাকা হয় যা মোট বরাদ্দের মাত্র ৩২ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ের সাথে লক্ষ্যমাত্রার পার্থক্যের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় রেখে ’উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলে যে পরোক্ষ করের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, কর ফাঁকি এবং কর এড়ানোর প্রবণতা, প্রত্যাবর্তী কর হার ব্যবস্থা, বিদেশে অবৈধ অর্থপাচার দেশের রাজস্ব আদায়ের গতি মন্থর করছে।

বর্তমান অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্ট সম্ভাব্য বৃহৎ আকারের রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংলাপের উপর গুরুত্ব আরোপ করে যা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ানোর কথা বলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।