ঢাকা: শুরু হলো দেশের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে সাহসী, সবচেয়ে দামি কাজ পদ্মা সেতু নির্মাণের পরীক্ষামূলক ভিত্তি স্থাপনের কাজ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিন ১ মার্চ রোববার বসানো শুরু হয়েছে সেতুর টেস্টপাইল বসানো।
রোববার ভোর হতেই পদ্মার পাড়ে উৎসবের আমেজ। চারিদিকে যেনো হৈ হৈ রব। বড় সমারোহে শুরু হয় পদ্মা নদীর মাঝে টেস্ট পাইল বসানোর কাজ। আতশবাজি-পটকা ফুটিয়ে সেই আয়োজনে সামিল হন পদ্মাসেতু সংশ্লিষ্টরা।
আর পদ্মার পাড়ে দুটি গরু, দুটি খাসি ও দুটি মুরগি জবাই হয়েছে। চলছে কর্মী-সংশ্লিষ্টদের জন্য দুপুরের ভোজের আয়োজন।
একটি সেতু নির্মাণে টেস্টপাইল বসানো এর ভিত্তির প্রাথমিক ও প্রধান কাজ বলেই ধরা হয়। পরীক্ষামূলক এই পাইলগুলো বসানো সম্ভব হলে তার ওপর ভিত্তি করেই বসবে সেতুর পিলার।
আর সে কারণে রোববারের আয়োজনেও কমতি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে বাড়লো সেতুর দৃশ্যমান কাজের মহাযজ্ঞ।
সেতু বিভাগের প্রকৌশলী ও পদ্মা সেতুর কাজের দায়িত্ব পাওয়া চায়না মেজরব্রীজের প্রকৌশলীরা এ আয়োজন উপভোগ করার মধ্য দিয়ে সেতুর চ্যালেঞ্জিং কাজে হাত দিলেন।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা এতে উচ্ছ্বসিত। তারা জানান, টেস্ট পাইলের কাজ দিয়ে ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডের যেমন বড় কাজ শুরু হলো তেমনি মূল সেতুর জন্য এটি একটি মাইলফলক। এজন্য আয়োজন আনন্দের সঙ্গেই শুরু হলো মূল সেতুর কাজ।
সরকারের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পটির নিয়মিত খোঁজ রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর স্বপ্ন তিনি যেমন দেখিয়েছিলেন এখন তারই বাস্তবায়ন কাজ চলছে। আর তা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। টেস্ট পাইলিংয়ের পর আগামী জুলাই মাসে মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরুতে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে সেতু বিভাগ প্রত্যাশা করছে।
পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেল সূত্র জানায়, মূল সেতুর পাইলগুলো ৩ ডায়ামিটারের। তবে টেস্ট পাইলের ক্ষেত্রে দেড় ডায়ামিটার দিয়ে ধারণক্ষমতার দেখা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, পাইলগুলো দেখতে গোলা আকৃতির। এর স্টিল প্লেট হবে ফ্লাট। এটা বেশ মোটা। যা পদ্মার ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে এনে ফ্রেব্রিকেট করা হবে। ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে এ জন্য প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা একটা অ্যাম্বেসির মত স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বাঁকা ও ওয়েল্ডিং করার কাজ করবে চায়না মেজর ব্রিজ। আর একেকটি পাইল এটা ২৫ মিটার টুকরো করে বের করা হবে।
মূল পাইলের পাইল ড্রাইভিং হ্যামার (যা হবে বিশ্বের সববচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন) জার্মানিতে বানানো হচ্ছে।
সেতু প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মাসেতুর মাথা তুলে দাঁড়াবে ৪২ টি পিলারের উপর। পদ্মার দু’দিকে থাকবে দুটো আর মাঝখানে ৪০ টি পিলার। পিলারের প্রত্যেক জায়গা সয়েল বোরিং করা হবে। এখন পর্যন্ত ৮ টি সয়েল বোরিং সম্পন্ন হয়েছে। আর নদীশাসন কাজের জন্য অনেকগুলো ড্রেজার লাগবে। এরমধ্যে কিছু ড্রেজার এসে গেছে বাকিগুলো আসার পথে রয়েছে। ড্রেজিং কাজ হলে পদ্মার দক্ষিণ দিকে চারশ মিটার ট্রায়াল সেকশন করা হবে।
এদিকে মূল সেতু ছাড়াও সেতুর অন্যান্য অংশের কাজ এগিয়ে গেছে। ছয় ভাগে
(প্যাকেজ) বিভক্ত দেশের সবেচেয়ে বড় এই প্রকল্প। পাঁচটি ভৌত কাজের এবং একটি তদারকি পরামর্শকসংক্রান্ত। ভৌত কাজগুলো হলো মূল সেতু, নদীশাসন, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো। এসব কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের এই সেতু দিয়ে যানচলাচল শুরু হবে ২০১৮ সালে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৫