ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সংশোধিত এডিপি

পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৫
পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

ঢাকা: চলতি অর্থ বছরের (২০১৪-১৫) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ১৭টি খাতের মধ্যে পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে অবহেলিত খাত গণসংযোগ, যোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান খাত।

এ তিনটি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ সবচেয়ে কম।

মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) দুপুরে আরএডিপি’র চূড়ান্ত আকার নির্ধারণে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব সফিকুল আজম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইপি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান, হুমায়ুন খালিদ প্রম‍ুখ।

সভা সূত্র জানায়, এবার আরএডিপি’র মোট আকার ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতকে।

সভা সূত্র আরও জানায়, পরিবহন খাতের সড়ক পরিবহনে চার হাজার ২শ’ ৯২ কোটি, সেতু খাতে আট হাজার ৫শ’ ৬৫ কোটি এবং রেলওয়ে, নৌ ও ‍বিমান পরিবহনে বরাদ্দ চার হাজার ১শ’ ৭৬ কোটি টাকা। পরিবহনের তিন খাত মিলিয়ে ১৭ হাজার ৩২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এর পরেই রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাত। এতে মোট আট হাজার ৬শ’ ৬৩ কোটি। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে আট হাজার ৩শ’ ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে আরএডিপি’র মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা ৪৭ হাজার ১শ’ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি খাতের তিনটিসহ মোট ৮টি খাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠানে সাত হাজার পাঁচ কোটি, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ছয় হাজার ৮শ’ ৪৪ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে চার হাজার ৭শ’ ৪২ কোটি, বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে চার হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি এবং কৃষি খাতে চার হাজার ১শ’ ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তবে ১৭টি খাতের মধ্যে সব থেকে অবহেলিত খাত গণসংযোগ, যোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান। শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে সংশোধিত এডিপি-তে মাত্র ৪শ’ ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।   অন্যদিকে যোগাযোগ খাতে ৭শ’ ৪৪ কোটি ও গণসংযোগ খাতে মাত্র ১শ’ ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এছাড়া পানি সম্পদ খাতে দুই হাজার ৮৯ কোটি, শিল্পখাতে এক হাজার ৮শ’ ৬৪ কোটি, তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে এক হাজার ৭১ কোটি, ক্রীড়া খাতে ১শ’ ৬৭ কোটি, সমাজকল্যাণ খাতে ৪শ’ নয় কোটি, জন প্রশাসন খাতে এক হাজার ৭শ’ এক কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শুরুতে মোট এডিপি’র আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩শ’ ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এসে প্রায় আট হাজার টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৭২ হাজার কোটি টাকা।
 
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ১০ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এটা অনুমোদন দেওয়া হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংশোধিত এডিপি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এডিপি’র আকার ধরা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩শ’ ১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর আগে এ পরিমাণে এডিপি’র আকার ধরা হয়নি। যে কারণে এবার সংশোধিত এডিপি-তে এর পরিমাণ কমতে পারে। কোন কোন খাতে কত খরচ হয়েছে সেই বিষয়টা দেখা হচ্ছে। আগামি ১০ তারিখে এনইসি সভায় এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

পরিকল্পনা সূত্র জানায়, নানা উন্নয়ন সহায়তা খাতেও গুরুত্বপূর্ণ বরাদ্দ রয়েছে সংশোধিত এডিপি-তে।
 
এর মধ্যে ‍অন্যতম পার্বত্য চট্রগ্রাম সহায়তা খাতে ১শ’ কোটি, পার্বত্য চট্রগ্রাম স্থানীয়ং সরকার উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৩২ কোটি, পার্বত চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ৪৫ কোটি ও বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা রয়েছে এক হাজার ৯শ’ ৫৫ কোটি টাকা।

এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের সহায়তা খাতে ১০ কোটি, উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৩শ’ ৮০ কোটি, জেলা পরিষদ বাবদ ৩শ’ ৪০ কোটি, পৌরসভা উন্নয়ন সহায়তা বাবদ ৩শ’ ৩০ কোটি ও সিটি কর্পোরেশন উন্নয়ন সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১শ’ ৮৫ কোটি টাকা।
                                 
২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মোট প্রকল্পের সংখ্যা এক হাজার ১শ’ ৯৭টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প এক হাজার আটটি, কারিগরি ১শ’ ৬৮টি ও জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিল (জেডিসিএফ) প্রকল্প ২১টি।

সংশোধিত এডিপি-তে বরাদ্দের তুলনায় কম হলেও প্রকল্পের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কৃষি খাতে। এ খাতে মোট প্রকল্প সংখ্যা ১শ’ ২৫টি। এছাড়া পল্লী উন্নয়ন খাতে ৫৪টি, পানিসম্পদ খাতে ৫৪টি, শিল্প খাতে ৩৪টি ও বিদ্যুৎ খাতে ৮০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

নতুন অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে। এখাতে নতুন প্রকল্প প্রায় ১শ’ ছয়টি।

শিক্ষা ও ধর্ম খাতে মোট প্রকল্প রয়েছে ৮৭টি। তবে সব থেকে প্রকল্পের সংখ্যা কম জন প্রশাসনে ২৩টি, বিজ্ঞান তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ২৩টি ও শ্রম-কর্মসংস্থান খাতে মাত্র ১৫টি প্রকল্প রয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রকল্প ও বরাদ সব থেকে কম।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।