ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আবাসন খাত হুমকিতে

অবিক্রীত পড়ে রয়েছে ১৩ হাজার ফ্ল্যাট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৫
অবিক্রীত পড়ে রয়েছে ১৩ হাজার ফ্ল্যাট ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানীতে বর্তমানে ১৩ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো ১০ থেকে ৩০ ভাগ ছাড় দিয়েও এখন আর আগের মতো ক্রেতা টানতে পারছে না।

প্রতিবছর আবাসন খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও অনেক কমে গেছে প্রবৃদ্ধির হার। ফলে আবাসন ব্যবসায় নেমে এসেছে ধস।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই খাতের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে মধ্যবিত্তদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে সংকট নিরসন হতে পারে। এতে মধ্যবিত্তরাও ফ্ল্যাট ক্রয়ে সক্ষম হতে পারেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আবাসন প্রকল্পে ক্রমবর্ধমান চড়া সুদ, ফ্ল্যাটের অসঙ্গতিপূর্ণ দাম, ক্রেতাদের আস্থাহীনতা, দেরিতে ফ্ল্যাট হস্তান্তর, চড়া নিবন্ধন ফি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কালো টাকার অনুপ্রবেশ, একচেটিয়া ব্যবসা, অব্যবস্থাপনা এবং শেয়ারবাজারে ধসের কারণে এই নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, নামে-বেনামে গজিয়ে ওঠা রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো গত ১৫ বছরে কমপক্ষে ১০ দফা ফ্ল্যাটের মূল্য বাড়িয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে যেখানে প্রতি বর্গফুট অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হতো ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, সেখানে ২০১০ সাল নাগাদ তা হয়েছে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনেক কোম্পানি তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে চলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যকর আইন না থাকায় নামে-বেনামে বেড়েই চলেছে এসব কোম্পানির সংখ্যা। আর তারাই নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ইচ্ছামতো ব্যবসা করছে। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বেশিরভাগ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিক্রি ৩০ থেকে ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমে গেছে।

ঢাকা নগরীতে কমপক্ষে ১৩ হাজার ফ্ল্যাট বর্তমানে অবিক্রীত পড়ে আছে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় বেশ কিছু প্রকল্প সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এক দিকে ফ্ল্যাটের দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা। অন্যদিকে নির্মাণাধীন বাড়িগুলো ক্রেতার কাছে হস্তান্তর নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

আবাসন খাতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ঋণ লেনদেনের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৩-২০১৪ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, আবাসন খাতকে গত বছর জুন পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মোট ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আগের অর্থ বছরে এর পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা এবং তারও আগের বছর ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফলে ঋণ প্রবৃদ্ধি হার কমার সঙ্গে সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনে রিয়েল এস্টেটের অবদান দিন দিন কমছে।

এ অবস্থায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নে যাতে অবদান রাখতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অপরিহার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে ফ্ল্যাটের মূল্য মধ্যবিত্তদের সামর্থ্যরে মধ্যে নিয়ে আসাটাই হবে ফলপ্রদ পদক্ষেপ।

এ ব্যাপারে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে বিভিন্ন কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হলেও বর্তমানে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। ঋণ সংক্রান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধি নয়, সংকট সৃষ্টির জন্য চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিই দায়ী।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।