ঢাকা: রাজশাহী ওয়াসা বাস্তবায়ন করছে রাজশাহী মহানগরীরর পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘চর ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পটির মোট বরাদ্দ রয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু সাত মাসে এই প্রকল্পে এক আনাও খরচ করতে পারেনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
এখানে উল্লিখিত হলো এমন ৩৫৪টি ঘটনার দুটি উদাহরণমাত্র।
প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুসন্ধানে আরও পাওয়া গেছে হতাশাজনক তথ্য।
বিষয়টিতে অস্বস্তিতে রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে এডিপিভূক্ত ১২৮৭টি প্রকল্পের মধ্যে শূন্যভাগ বাস্তবায়নে ৩৫৪ প্রকল্প ছাড়াও মাত্র ১ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা রয়েছে ২৭টি। আর ২ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ১৫টি।
আইএমইডি সূত্র আরও জানায়, ৩ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যাও ১১টি। আর মোট প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ২০টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার মাত্র ৪ ভাগ।
১০টি প্রকল্প রয়েছে যাদের বাস্তবায়ন হার ৫ ভাগ। এছাড়া ৬ থেকে ৭ ভাগ অগ্রতির প্রকল্প রয়েছে ২১টি। সাত মাসে ৮ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যাও ১২টি। ৬টি প্রকল্প রয়েছে সাত মাসে মাত্র ৯ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।
আইএমইডি সূত্র জানায়, শূন্য থেকে ৯ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে এমন প্রকল্পের মোট সংখ্যা ৪৬৪টি। ১০ থেকে ৪৯ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৪৮৩টি। ৫০ থেকে ৬০ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র ৩০টি।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ভালো এমন প্রকল্পের সংখ্যা হাতে গোনা। যেমন- ৬০ থেকে ৬৯ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৩৩টি। অপরদিকে ৭০ থেকে ৮৯ ভাগ অগ্রগতি এমন প্রকল্পের সংখ্যা মাত্র ৫৯টি। ৮০ থেকে ৮৯ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৭টি প্রকল্পের। আর ৯০ভাগের বেশি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৯টি প্রকল্প।
প্রকল্প বাস্তবায়নের এই চিত্রে হতাশা প্রকাশ করেছে আইএমইডি।
এ বিষয়ে আইএমইডি’র একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে ৩৫৪টি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। নতুন কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া সত্ত্বেও নানা জটিলতায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ টাকা খরচ করতে পারেনি। এছাড়া কারিগরি কিছু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে জটিলতা থাকায় প্রকল্পে টাকা খরচ করা যায়নি। এছাড়া কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রকল্পের তথ্য এখনও জমা দেয়নি। তাদের নানা ধরনের সমস্যা আছে এতে করে তাদের শূন্য অগ্রগতি বলে গণ্য করেছি।
সূত্র আরও জানায়, সাত মাসে এডিপি বরাদ্দের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। এডিপি বরাদ্দের মধ্য থেকে প্রথম সাত মাসে ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করেছে মাত্র ২৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট আকার ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৮ লাখ, অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৬ কোটি টাকা এবং বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা বাবদ বরাদ্দের পরিমাণ ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
এই অর্থের মধ্য থেকে মাত্র ২৭ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
আইএমএডি সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরে বাকি আছে মাত্র পাঁচ মাস অথচ এখনও এডিপিতে টাকা পড়ে আছে ৫৮ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা।
এই প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাস্তবায়নের ক্ষমতা রেখেই প্রকল্প হাতে নিতে হবে। প্রকল্প হাতে নিলাম কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারলাম না এর কোনো মানে হয় না।
বাস্তবায়ন ক্ষমতা না রেখে অপরকে খুশি করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে বলেই মত দেন তিনি।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সাত মাসে ৩৫৪টি প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি না হওয়াটা উদ্বেগের বিষয়। জ্বালানি ও সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যদি ভালো অগ্রগতি না হয় তবে সরাসরি জিডিপি’র ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম অবশ্য এই অগ্রগতির হারে সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পই আকারে ছোট। তাই, তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পগুলো কোনো না কোনোভাবে জিডিপি তৈরি করার কাজে লাগে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় অনেক চুরি হয়। আমি সব সময় বলি, অকাজের উদ্যোগের চাইতে কোনও উদ্যোগ না হওয়াই ভালো।
৩৫৪টি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
এই প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্প বিলম্ব হলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। অনেক প্রকল্প আছে যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হলে সুবিধাভোগীরা সুবিধা বঞ্চিত হন। সময়মতো প্রকল্পের কাজ না হলে প্রকল্প রিভিউ করতে হয়। এতে করে ব্যয় বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো একটি অপরটির সঙ্গে জড়িত। একটি প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত না হলে অপর প্রকল্পের ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া আইএমইডিও যেন যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি করে। এই দুটি বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের বার বার বলে আসছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫