খুলনা: খুলনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিম্নমানের পণ্য চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মেলায় প্রত্যাশিত দর্শনার্থী না থাকায় স্টল মালিকরা চড়া দামে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে খরচ উসুল করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
ক্রেতারা বলছেন, নামে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হলেও সেখানে আন্তর্জাতিক মানের তেমন কিছুই নেই। বিভিন্ন দেশের নামে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন থাকলেও সেখানে বিক্রি হচ্ছে দেশী পণ্য।
মেলায় প্রসাধনী, জুয়েলারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী, চটপটি, চা-কফি, জুতা-সেন্ডেল, কাপড়ের স্টলসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্টল রয়েছে।
এসব দোকানের বেশির ভাগ পণ্যই নকল ও নিম্নমানের বলে আগত দর্শনার্থীরা বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন।
ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করা হচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার (২৩ মার্চ) মেলা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে গিয়ে আগত দর্শনার্থীদের এমন অভিযোগের সত্যতা মিললো।
নগরীর ইকবাল নগর এলাকার গৃহিণী নাছিমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন আগে মেলা থেকে দু’জোড়া সেন্ডেল কিনেছিলাম। দিন না যেতেই ছিঁড়ে গেছে। সব নকল জুতা ও সেন্ডেল বিক্রি হচ্ছে মেলায়। ফেরত দিতে এসেছি। কিন্তু দোকানদার ফেরত নিতে চাচ্ছে না।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসিবুর রহমান বলেন, মেলার পারফিউম গ্যালারির একটি স্টল থেকে বিদেশি পারফিউম কিনেছিলাম। বাসায় নিয়ে দেখি মেয়াদোত্তীর্ণ। তাই ফেরত দিতে এসেছি।
তিনি জানান, পণ্যের মোড়কের গায়ে খুচরা বিক্রয় মূল্য লেখা নেই। যা ভোক্তা অধিকারবিরোধী।
লিজা ফুড থেকে রোববার বিকেলে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী কিনেছেন আবদুর রহিম। বাসায় নিয়ে দেখেন সেগুলোর মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ এবং ওজনে কম।
সোমবার সকালে এগুলো ফেরত দিতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলার নামে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করছেন দোকানিরা।
মেলায় আগত নাছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, স্টার কাবাব অ্যান্ড চটপটি হাউস থেকে একবাটি চটপটি খেয়েছি। মান ভালো না। তারপরও একবাটি চটপটির দাম নিয়েছে ৬০ টাকা। বাইরে যার মূল্য মাত্র ৩০ টাকা।
নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে দোকানদাররা দোকানের ভাড়া ওঠাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ক্রেতাদের মতই এ মেলার পণ্যসামগ্রী ও খাদ্য সামগ্রীর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খুলনার স্থানীয় মার্কেট এবং বিপণী বিতানের ব্যবসায়ীরা।
নগরীর জলিল টাওয়ারের অরেঞ্জটেল দোকানের মালিক এমএ সালেহীন জানান, এই মার্কেটের জিনিসপত্র আর বাণিজ্য মেলার জিনিসপত্রের গুণগত মানের যোজন-যোজন ব্যবধান রয়েছে। যতসব সস্তা ও নিম্নমানের জিনিস বিক্রি হয় বাণিজ্য মেলায়।
তিনি বলেন, মানুষ মেলায় সস্তায় কিনতে পারে বলে যায়। ওখানে যেসব জিনিস বিক্রি হয় তার থেকে ফুটপাতের জিনিসের মান ভালো।
একই বিষয় কথা হয় খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের নিউ বিসমিল্লাহ ফেব্রিক্সের মালিক আলম হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এখানকার জিনিস আমরা কাস্টমারদের গ্যারান্টি সহকারে দিতে পারি। বাণিজ্য মেলার জিনিস কি গ্যারান্টিতে দেবে ?
আলম হোসেন বলেন, আমরাও কিছু জিনিস কম দামে বিক্রি করি। কিন্তু বাণিজ্য মেলার ৫৯৯ টাকায় তিন সেট ‘থ্রি-পিস’ বিক্রি হয়। তাহলে বোঝেন?
তিনি জানান, আমাদের এখানে যেসব বিদেশি ‘থ্রি পিস’ তার মেমো আমি দেখাতে পারি। কিন্তু বাণিজ্য মেলার বিদেশি জিনিসের কোনো মেমো নেই। ইচ্ছা করলে যাচাই করে দেখেন সত্যি কি না?
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ক মিয়া মো. রাসেল আহমেদের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক (উপসচিব) সৈয়দ রবিউল আলম সোমবার সকালে বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে । এমন খবর আমাদের কাছেও আছে। এ বিষয়ে মেলায় অভিযান চালানোর জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে জানানো হয়েছে।
খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী ১৪তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এবং মেসার্স চামেলি ট্রেডার্স যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে।
মাসব্যাপী এ মেলার মেয়াদ গত ১৪ মার্চ শেষ হলে আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্ধিত সময়ের এই মেলা চলবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫
** মাঠে মেলা রাস্তায় খেলা