ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাট বাদ রেখে আবাদ তালিকা!

বেলাল হোসেন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫
পাট বাদ রেখে আবাদ তালিকা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শেরপুর (বগুড়া): উৎপাদন বাড়বে বহুগুণ। তৈরী হবে কাপড় ওষুধসহ রকমারি পণ্য।

চাষ হবে সব জমিতেই। পাটের জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্সি) আবিষ্কারের পর পাট নিয়ে এমনই সম্ভবনার কথা ভাবা হয়।

তখন পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারের ঘোষণার পর থেকে দেশজুড়ে প্রচণ্ড হৈচৈ পড়ে যায়। ঠিক সেই মুহুর্তে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল ‘তবে কী আবারও দেশে পাটের সোনালী অতীত ফিরে আসছে’।

তবে পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কারের ঘোষণায় সোনালী অতীত ফিরে পাবার আসায় ২০০৯সাল থেকে টানা তিন বছর এখানকার কৃষকরা এই ফসল চাষের জমির পরিমান বেশ বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু বাজারদরে আগের অবস্থায় কোন পরিবর্তন না আসায় আবারও কৃষকরা পাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।  

অব্যাহত লোকসান ঠেকাতে তারা পাটকে অনেকটা বাদ রেখেই আবাদ তালিকা প্রণয়ন করছেন। কেবল সাংসারিক প্রয়োজনে কিছু সংখ্যক জমিতে কৃষকরা পাট চাষ করছেন। কৃষি বিভাগের হিসাব থেকেই পাট চাষের এ করুণ চিত্র পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার (১৭মার্চ) বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে পাট চাষ সম্পর্কে এসব তথ্য ওঠে আসে।

পাট চাষ সম্পর্কে একজন কৃষক হিসেবে আপনে কী ভাবছেন জানতে চাইলে বাংলানিউজের কাছে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা পাটচাষী তোফাজ্জলের জবাবটি ছিল এরকম, অতসত বুঝিনা। তিনি একজন কৃষক। ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করায় তা কাজ। শুধু ফসলের ন্যায্য দাম চাই। লোকসান গুনতে গুনতে কোমর ভেঙে গেছে। এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে চাই।

তিনি আরও জানান, তার পূর্ব পুরুষরা আগে আবাদি জমির প্রায় ৯০ভাগ জমিতে পাট চাষ করতেন। কিন্তু ধপাধপ দামে পড়ে যাওয়ায় পাট চাষের জমির পরিমান কমাতে থাকেন। এমনকি কোন কোন বছর পাট চাষ বন্ধও রাখেন।

কৃষক তোফাজ্জল জানান, প্রায় চার যুগ ধরে অন্য ফসলের সঙ্গে সঙ্গী ফসল হিসেবে পাট নিয়ে মাঠে আছেন তিনি। এবারও ২ বিঘা জমিতে পাট লাগানো প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে আজ পর্যন্ত পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার সম্পর্কে তিনি কোন কিছু জানেন না।

পাটচাষী ভীমজানি গ্রামের উজ্জল কুমার রায় বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে ফসল ফলিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই ছোটখাটো ব্যবসাও করেন তিনি। তাই সাংসারিক প্রয়োজনে সামান্য জমিতে তিনি পাট চাষ করেন।

অনুরুপ কথা জানালেন পাটচাষী ভীমজানির শাফি, আব্দুর রাজ্জাক, গোবিন্দ, ভাটরা গ্রামের আব্দুস সাত্তার, কাজেম উদ্দিনের মত অন্যসব কৃষকরাও।

আলাপচারিতায় এসব পাটচাষীরা বাংলানিউজকে জানান, সেই ১৯৮৪সালের কথা। তখন এক মণ পাট রকমভেদে ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হতো। মূলত এরপর থেকেই পাটের দাম কমতে থাকে। ১৯৮৮-৯০’এর দিকে এসে প্রতিমণ পাটের দাম দাঁড়ায় ৪৫০-৬০০ টাকায়। এমনকি ৯৭’এর শেষ দিকে এসে একেবারে পাটের দাম পড়ে যায়। রকমভেদে প্রতিমণের দাম দাঁড়ায় ৩০০-৪০০ টাকায়।

তবে ২০০৯সালের শেষ দিকে আবারও পাটের দাম বাড়তে শুরু করে। সে বছর নভেম্বর-ডিসম্বরে রকমভেদে প্রতিমণ পাট ২৪০০-২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তারা আরও জানান, পরের বছর থেকে আবারও পাটের দাম কমতে শুরু করে। গেল মৌসুমে প্রতিমণ পাট ১২০০-১২৫০টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এককালে কৃষকের আবাদ তালিকার অধিকাশং জায়গাজুড়েই স্থান পেত পাট চাষ। সে সময় তারা উৎপাদিত পাটের ন্যায্য মূল্যও পেতেন। এজন্যই তখন তাদের নিকট পাট সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত ছিল।

কিন্তু বিগত বছরগুলোতে কৃষক পাট চাষ করে দামে ব্যাপক মার খান। ফলে ধীরে ধীরে আবাদ তালিকা থেকে পাট চাষের জমির পরিমান কমাতে থাকেন। একপর্যায়ে একেবারে কমিয়ে ফেলেন। সাংসারিক প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা বাড়তি জমিতে পাট লাগানো অনেকটা বন্ধ করে দেন।

সবমিলেই কৃষকরা ধারণা করছেন, হয়তো আর কোন কালেই পাটের সেই হারানো অতীত ফিরে আসবে না। ফলে তাদের ঠোঁঠে মুখে সেই হারানো হাসিও আর ফিরে আসবে না।

এক নজরে পাট চাষ

অর্থ বছর     ল্যমাত্রা    অর্জিত ল্যমাত্রা     উৎপাদন
২০০৭-০৮    ৩৭৫ হেঃ      ৫০০ হেঃ          ৫,১২৭ মেঃ টন
২০০৮-০৯    ৫০০ হেঃ      ৩৭০ হেঃ          ৩,৭৩৫ মেঃ টন
২০০৯-১০    ৩৭০ হেঃ      ১৬৬১ হেঃ        ১৭,২৪৯ মেঃ টন
২০১০-১১     ১৬৬১ হেঃ    ১৩৩০ হেঃ        ১৩,৭৫০ মেঃ টন
২০১১-১২     ১৩৩০ হেঃ    ৭০০ হেঃ          ৭,০৪৬ মেঃ টন
২০১২-১৩    ৭০০ হেঃ       ৫৭৫ হেঃ          ৫,৭৮৪ মেঃ টন
২০১৩-১৪    ৫৭৫ হেঃ       ৪৮০ হেঃ          ৪,৯০২ মেঃ টন
২০১৪-১৫     চাষ শুরু       চাষ শুরু            চাষ শুরু

শেরপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, পাট চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি অফিস অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাজারে পাটের চাহিদা আগের তুলনায় কমে গেছে। এছাড়া অব্যাহতভাবে পাটের বাজারদর পড়ে যাওয়ার কারণে কৃষক অন্য ফসল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এরপরও কৃষি বিভাগ উন্নতজাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কৃষক পর্যায়ে কাজ করছে বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।

পাশাপাশি চলতি মৌসুমে বেশ ভাল পরিমান জমিতে পাট চাষ হবে বলেও এই কর্মকর্তা আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘন্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।