ঢাকা: চৈত্রের দাবানলে সতেজতা ফিরিয়ে আনতে তরমুজের জুড়ি নেই। প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ে ঘরে ফেরার পর এক টুকরো তরমুজ মনে-প্রাণে প্রশান্তি এনে দেয়।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বাদামতলী ফল মার্কেটের তরমুজ ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের সর্ববৃহৎ এ ফলের মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ী এখন তরমুজ বেচা-কেনায় ব্যস্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লঞ্চযোগে বুড়িগঙ্গার তীরে বাদামতলী ঘাটে তরমুজ আসছে। এর মধ্যে বেশি আসছে ভোলা, বরিশাল ,পটুয়াখালী, রাঙ্গাবালী থেকে। সেখান থেকে ‘শ’ হিসেবে তরমুজ কিনে নৌকায় ভর্তি করছেন আড়তদাররা। পরে সেগুলো ঘাটে নিয়ে ঘাট শ্রমিকরা গুনে গুনে ঝুড়ি ভর্তি করছেন। নষ্ট হওয়া তরমুজগুলো নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আর আড়তে নেওয়ার পর আকার ও জাতভেদে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে তরমুজ।
মাঝ নদীতে হাক-ডাক
দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে অধিকাংশ তরমুজ চাষি লঞ্চে করে বাদামতলী ফলের মার্কেটে নিয়ে আসেন তরমুজ। সেখানেই চলে হাক-ডাক। জেটি সংকটের কারণে তরমুজ বোঝাই লঞ্চগুলো নোঙ্গর করা হয় মাঝ নদীতে। লঞ্চের ভেতরে হাক-ডাক শেষে সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় করে ঘাটে ভেড়ানো হয়।
খুচরা ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে দাম বাড়ে তিনগুন
দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ জাতের তরমুজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলালিংক, গ্রামীণ, কালা, আনারকলি, অলক্লিন, চায়না-২,এশিয়ান-২, বালি তরমুজ, বিগ ফ্যামিলি।
এসব তরমুজ নদী ও স্থল পথে রাজধানীতে আনেন আড়তদাররা। আড়তদার থেকে খুচরা বিক্রেতা হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছতে প্রতিটি তরমুজের দাম দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৩৫০ টাকা।
বাদামতলী ঘাটে লঞ্চগুলোতে আকার ও জাতভেদে একশ’ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে বারো হাজার টাকায়। দ্বিগুন দামে আড়তদাররা সে তরমুজ বিক্রি করছেন চার হাজার থেকে বিশ হাজার টাকায়। আর খুচরা বিক্রেতারা সে তরমুজ ভোক্তার কাছে বিক্রি করছেন ছয় হাজার থেকে পয়ত্রিশ হাজার টাকায়।
ভোলা থেকে তরমুজ বিক্রি করতে বাদামতলি ঘাটে আসা ফয়েজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রতি ‘শ’ তরমুজ বিক্রি করছি দুই থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাংলালিংক বড় সাইজ।
ফলন কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশানুরুপ ফলন পেয়েছি। কষ্ট করেছি কেষ্ট মিলেছে।
বরিশালের তরমুজ চাষি আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, সর্বোচ্চ বারো হাজার টাকা ‘শ’ বিক্রি করলেও কার্গো লঞ্চে করে তরমুজ আনতে প্রতিটি তরমুজে খরচ হয় আট থেকে দশ টাকা। আর ঘাট থেকে খালাস করে ব্যবসায়ীদের আড়তে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি তরমুজের মোট খরচ হয় ষোল থেকে আঠার টাকা।
ভরসা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আকবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, নষ্ট হওয়া তরমুজ আর লেবার খরচসহ প্রতি ‘শ’ তরমুজ আকৃতিভেদে চার,আট,দশ, বারো,ষোল এবং বিশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাবাজারের ওভারব্রিজের নিচে তরমুজ ব্যবসায়ী লাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আকারভেদে ৬০ থেকে ৩৫০ টাকায় তরমুজ বিক্রি করছি।
ঘাটের মূল্যের সঙ্গে বাজরের মূল্যের এতো তফাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের লাইন খরচ, ভ্যান ভাড়া আছে। আড়ৎ থেকে এখানে আনতে বেশ কয়েকটা তরমুজ নষ্ট হয়। সব খরচ বাদ দিলে বেশি একটা লাভ হয় না বলে দাবি তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৫