ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অবরোধের ৯০ দিন

বুড়িমারী স্থলবন্দরে তিনগুণ রাজস্ব!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৫
বুড়িমারী স্থলবন্দরে তিনগুণ রাজস্ব! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লালমনিরহাট: ৯০দিনের টানা অবরোধ আর হরতালের মধ্যেও রেকর্ড ভেঙ্গে তিনগুণ রাজস্ব আয় করেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর।

বিএনপি’ নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ আর ঘনঘন হরতাল কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি এই স্থলবন্দরে।

সারাদেশে অবরোধ চললেও এ বন্দরের কাজকর্ম সব সময়ই ছিল স্বাভাবিক।

চলমান অবরোধেও বুড়িমারী স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক কাজকর্ম নির্বিঘ্নে চলতে পারায় বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও তিনগুণ রাজস্ব আদায় হয়েছে এখানে।
 
গত বছর জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৮০৯ ট্রাক পণ্যের বিপরীতে এই স্থলবন্দর আয় করেছে ৪৫ লাখ ৫৬হাজার ৮২২টাকা শুল্ক আদায় হয়েছে এক কোটি ২০লাখ ২১ হাজার টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৩৪৮ ট্রাক পণ্যের বিপরীতে বন্দর আয় করেছে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ৯৯৬টাকা, শুল্ক আদায় হয়েছে ৮৫ লাখ ৩৫হাজার টাকা এবং মার্চে ৪ হাজার ১০৯ ট্রাক পণ্যের বিপরীতে বন্দর আয় করেছে ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ৭১০টাকা, শুল্ক আদায় হয় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ও এপ্রিলে ৪হাজার ৩৪২ ট্রাক পণ্যের বিপরীতে বন্দর আয় করেছে ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৬ টাকা, শুল্ক আদায় হয় ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
 
চলতি বছর টানা অবরোধ ও হরতালের মাঝেও জানুয়ারিতে ১০ হাজার ৬৯০ ট্রাক পণ্যের বিপরীতে বন্দর আয় করেছে এক কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৫টাকা, শুল্ক আদায় হয়  ৫ কোটি ৫০ লাখ ৩৫ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ২৪৫ ট্রাক পণ্যের বিপরীতে বন্দর আয় করে ৫৮ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৩টাকা, শুল্ক আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬হাজার টাকা ও মার্চে বন্দর আয় করেছে ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা , শুল্ক আদায় হয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

২০১৪ সালের জানুয়ারি-মার্চে মোট আদায় হয়েছিল ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২৬ হাজার ৫২৮ টাকা। আর হরতাল অবরোধেও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে ৯০ দিনে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৫৬৮টাকা। যা গত বছরের প্রায় তিন গুণ।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সালের ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বুড়িমারী স্থলবন্দর উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান। সেই থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও ভুটান পাথর, পাথরজাত দ্রব্য, জিপসাম, পাটবীজ,পারটেক্স,প্রসাধন সামগ্রী,ফল, মেলামাইন, ফার্নিচার, তুলা, ঝুট কাপড়, খাদ্যসামগ্রী, গ্লাস জাতীয় পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের বাণিজ্য করছে।

বুড়িমারী বন্দর ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধের প্রথম দিকে পরিবহন শ্রমিকরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন। ওই সময়টায় তাই  পরিবহন খরচ বেড়েছে। তবে বর্তমানে পরিবহন খরচ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

সজীব ট্রেডার্সের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বকুল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, অবরোধ শুরুর দিকে পরিবহন খরচ কিছুটা বেড়ে গেলেও বুড়িমারী বন্দরে ব্যবসাবাণিজ্য ছিল স্বাভাবিক। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আরো নিরাপদ আরো নির্বিঘ্ন হলে এ বন্দরে রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।

বুড়িমারী বন্দর ইনচার্জ মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ী, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় হরতাল অবরোধের মাঝেও আগের তুলনায় তিন গুণ বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে। অবরোধ শুরুর দিকে পুলিশ ও বিজিবি’র মাধ্যমে পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে হয়েছে। এখন আর তা করতে হয় না। বন্দরের বাইরে দেশের সর্বত্রই এখন পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শুধু লক্ষমাত্রাই অর্জিত নয়, বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাস্টম কর্তৃপক্ষও বিগত বছরের তুলতায় তিনগুণ রাজস্ব আদায় করেছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার(এসি) বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যেও এই স্থলবন্দর থেকে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে সরকার। ব্যবসায়ীসহ এখানকার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা আর প্রশাসনের আন্তরিকতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৫
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।