ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কর্পোরেট কর হার হ্রাসসহ ৭৫ প্রস্তাব এমসিসিআই’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৫
কর্পোরেট কর হার হ্রাসসহ ৭৫ প্রস্তাব এমসিসিআই’র

ঢাকা: ব্যাংক, বিমা কোম্পানি ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার পুনর্বিন্যাস ও তা কমিয়ে আনাসহ ৭৫টি বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টি(এমসিসিআই)।

একই সঙ্গে আগামী বাজেটে অলাভজনক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো ও ব্যক্তি শ্রেণীর করসীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান তারা।



মঙ্গলবার(৭ এপ্রিল’২০১৫) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে(এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব করেন তারা।

এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়কর সংক্রান্ত ৩৮টি, মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত ২৫, শুল্ক সংক্রান্ত ৭টিসহ মোট ৭৫টি প্রস্তাব করা হয়েছে।

এনবিআরের মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআইয়ের মূল বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির ট্যাক্সেশন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান আবিদ এইচ খান।

মূল প্রস্তাব তুলে ধরে আদিব খান বলেন, ব্যাংক, বীমা কোম্পানি এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্পোরেট কর ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। যা পাশের দেশগুলো ও এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ভারতের কর্পোরেট কর ৩৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এটা ব্যাংক ও অব্যাংক জাতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য প্রযোজ্য।

তিনি বলেন, জীবন বিমা কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে করের হার ১৫ শতাংশ। এরমধ্যে সারচার্জ ২ দশমিক ৫ শতাংশ। সাধারণ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৫ শতাংশ সারচার্জসহ কর্পোরেট কর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বে জাপানের কর্পোরেট কর সবেচেয়ে বেশি ৩৮ শতাংশ। পাকিস্তানে এই করের হার ৩৭ শতাংশ। তাই পাশের সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কর্পোরেট কর উচ্চ থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত পুন:বিনিয়োগের তহবিলের জমা হওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তাই ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানিসমূহের কর হার ৪০ শতাংশ করা দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি আরও বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করের প্রকৃত পরিমাণ আমদানিকৃত মালামালের ওপর আদায় করা হয়। ফলশ্রুতিতে কর নির্ধারণী কর্মকর্তাগণের স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ্য করা যায়। তাই চেম্বার এই হার ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করে।

বর্তমানে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। ভৌত অবকাঠামোগত দূর্বলতা, গ্যাস ও বিদ্যুতের স্বল্পতাসহ উৎপাদন খাত বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী অর্থবছর অধিক চ্যালেঞ্জিং হবে। তাই আগামী অর্থ বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ব্যহত হবে।
 
স্থানীয় শিল্পসমূহে কর বৈষম্য দূর করা আবশ্যক উল্লেখ করে এমসিসিআই’র পক্ষ থেকে বলা হয়, মৌলিক কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের ওপর কর হ্রাস করলে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া কর নিরুপন ও প্রদানের ক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করলে করের পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি পাবে।

কর অব্যাহতির সীমা উর্ধ্ব করার বিষয়ে প্রস্তাব বলা হয়, জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় কর অব্যাহতির উর্ধ্বসীমা পুন:নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আগামী অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের জন্য কর অব্যাহতি সীমা ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, মহিলা ও ৬৫ বছরের উর্ধ্বে পুরুষদের জন্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার  টাকা করার প্রস্তাব করেন।

আলোচনায় বাজেট প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশের উৎপাদন খাত এখনো বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করছে। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দেশের বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান ও আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়ী মহলও চলতি অর্থ বছরে কাক্ষিত প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশংকা রয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন হবে। তাই অবশিষ্ট পাঁচ মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন বিষয়। তবে অতীতের মতো এলটিইউয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে ঘাটতি পূরণে বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করা দরকার।

এমসিসিআইয়ের প্রস্তাবের জবাবে মো. নজিবুর রহমান বলেন, আপনাদের প্রস্তাব আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। রাজস্ব ঘাটতি পূরণে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তিকে(এডিআর) আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। তাই আদালতে গিয়ে টাকা খরচ না করে এডিআরের সুযোগ গ্রহণ করা উচিত।

এসময় এমসিসিআইয়ের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এনবিআর সদস্যরা, প্রথম সচিব ও সংগঠনের অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৫
এডিএ/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।