ঢাকা: চৈত্রের শেষ আর এপ্রিলের শুরুতেই বাঙালির মনে শরু হয় বৈশাখ বরণের অধীর অপেক্ষা ও উৎসবের তোড়জোর। পহেলা বৈশাখে বাঙ্গালিয়ানায় নিজেদের সাজিয়ে তুলতে প্রায় সব বয়সী মেয়েদের মধ্যে শুরু হয় শাড়ি ও বাহারি পোশাক সংগ্রহের ধুম।
প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ফ্যাশনের মিশেলে বৈশাখী সাজে এসেছে নতুন মাত্রা। লাল-সাদা রঙ বাঙ্গালির চিরন্তন বৈশাখী সাজ হলেও সময়ের সাথে সাথে লাল-সাদাতেই সীমাবদ্ধ নেই বৈশাখী শাড়ি ও পোশাক। তবে সাজ যাই হোক, নিজের সাথে মানানসই পোশাকই এবারের বৈশাখের প্রধান আকর্ষণ।
আর তাই তো নতুন পোশাক তৈরিতে দর্জিপাড়াগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে কিশোরী, তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের নারীরা। তবে খরচ কম বলে এবারের বৈশাখীতে আলাদা রঙের কাপড় কিনে তাতে স্টোন, পুতি, ভেলভেটের লেজ লাগিয়ে সালোয়ার ও শাড়ি বানানোর চাহিদা বেশি লক্ষ্য করা যায় মেয়েদের মধ্যে।
বৈশাখকে কেন্দ্র করে দর্জিপাড়ার ব্যস্ততা বাড়ছেই। বৈশাখের মনপসন্দ অর্ডারি পোশাক তৈরি করাতে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা।
গত শুক্রবার সারাদিন নিউমার্কেট, গাউছিয়া, গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেয়া যায় সবখানেই চলছে বৈশাখের বর্ণিল পোশাক তৈরির বিপুল আয়োজন। নিউ মার্কেটের শান্তা টেইলার্সের কর্মচারি রফিক জানান, এবারের বৈশাখে সাধারণ সালোয়ার কামিজ তৈরিতে মজুরি রাখা হচ্ছে ৪শ টাকা। যা আগের বারেও একই ছিলো। তবে কোনো কোনো বিশেষ পোশাক তৈরিতে ডিজাইন অনুপাতে মজুরি ২শ থেকে ৩শ টাকা বেশিও রাখা হচ্ছে ।
আধুনিক মেয়েরা ভিড় করছে চাদনি চক ও গাউছিয়া মার্কেটের টেইলার্সগুলোতে। সেখানে বিভিন্ন রঙের কাপড় কিনে নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করতে দিতে এসেছেন জেমি (২৪)।
বললেন, গোল্ডেন পুতি ও ভেলভেটের লেজ কিনেছি। সাদা, সবুজ ও লাল রঙের শাড়ি তৈরি করে তার উপর এই লেজ বসাবো। রেডিমেড পোশাকের চেয়ে তৈরি পোশাকে খরচ কম। তাছাড়া নিজের মনের মতো্ করে ডিজাইনটাও করা যায়।
ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের তিন তলার সিদ্দিক টেইলার্সের মালিক সিদ্দিক জানান, এবারের বৈশাখে রেডিমেড পোশাকের থেকে অর্ডারি পোশাকের চাহিদা বেশি। তাই এপ্রিলের শুরু থেকেই কাস্টমার বেশি। সালোয়ার কামিজ ৪শ ৫০ থেকে ৬শ, শাড়িতে লেজ বসানো ৫শ, ছোটদের পোশাক ৪শ(১ পিজ)টাকা করে মজুরি নেওয়া হচ্ছে।
বসে নেই রাজধানীর গুলশান এলাকার দর্জিরাও। ওই এলাকায় তৈরি পোশাকের চাহিদা কম থাকলেও বৈশাখে রেডিমেড পোশাক কেনার পাশাপাশি নিত্য নতুন ডিজাইনের পোশাকও তৈরি করতে দিচ্ছেন ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা। তবে অন্যসব জায়গার তুলনায় এই মার্কেটে মজুরি দ্বিগুণ। এমনটিই জানিয়েছেন গুলশান-১ বিসিসি মার্কেটের বাবর আলী।
জানান, বৈশাখে নরমাল সালোয়ার কামিজে ৮শ টাকা আর স্পেশাল সালোয়ার-কামিজে এক হাজার টাকা মজুরি রাখা হচ্ছে। ছোটদের জামা ৬শ, ফতুয়া ৭শ এবং শাড়ি তৈরিতে ডিজাইন অনুযায়ী মজুরি নেওয়া হচ্ছে। তবে গতবারের তুলনায় ওই এলাকায় এবার ক্রেতাদের আনাগোনো বেশি দেখা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রিয়াঙ্গণ শপিং সেন্টারের সূচনা টেইলার্সের মুজরিও নিউ মার্কেটের দামের সমান দাম। তবে ডিজাইন অনুযায়ী দামের পার্থক্য রয়েছে বলে জানান দোকানের প্রধান কর্মচারি শাহাদাৎ।
ওই দোকানে পোশাক বানাতে দিতে আসা সিনথিয়া (১৯) জানান, পিংক সিটিতে গিয়ে একটি সালোয়ার কামিজের ডিজাইন দেখে এসেছি। মোবাইলে ছবি তুলে এনেছি। সাদা কাপড়ের উপর কুরুসের কাজ দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে কাঁচা হলুদ আর গাঢ় সবুজ রঙের কামিজ। ওই রঙের কাপড়গুলোই কিনে এনেছি।
তিনি আরো বলেন, ওই সালোয়ার কামিজের মূল্য লেখা ছিলো ৬ হাজার টাকা। এখন টেইলার্স থেকে বানাতে সর্বমোট খরচ হবে ২ হাজার টাকা। তাছাড়া টেইলার্স থেকে তৈরি করলে সাইজেও ফিটিং হবে আমার। ’
নিজের মধ্যে বাঙ্গালিয়ানা ফুটিয়ে তুলতে শুধু পোশাক অথবা শাড়িই নয় সবখানেই চাই ঐতিহ্যের ছাপ আর রুচি। তাইতো কপালে লাল বা সবুজ টিপ, হাতে ম্যাসিং রেশমি চুড়ি, গলায় মাটির গহনা আর পায়ে আলতা না পরলে যেন পরিপূর্ণ হয় না বৈশাখী সাজ।
শাড়ির সাথে এসব কিনতে ছবিরহাট, বেইলি রোড়, দোয়েল চত্বরেও রয়েছে শৌখিন মেয়েদের পদচারণা। ছবিরহাটে চুড়ি কিনতে আসা রিমি (১৬) জানান, সাদা জমিনে সোনালি পাড়ের শাড়ি কিনেছি। দাম বেশি আর ভিড় হবে ভেবে আগেভাগেই ম্যাচিং করে চুড়ি, গহনা কিনে রাখছি। ’
বৈশাখের মাত্র কয়টা দিন। এর মধ্যে নিজেকে মনকাড়া সাজে বর্ণিল আর মনলোভা রূপে তুলে ধরতে নিরন্তর চলছে প্রস্তুতি। তবে সাজ যাই হোক নিজের রুচি ও সাধ্যের সমন্বয়ে বর্ণিল হয়ে উঠবে বাঙ্গালির এবারের “পহেলা বৈশাখ”। প্রাণের উৎসব ‘বৈশাখী মেলা’য় অপরূপ সাজে সাজবে পুরো বাংলা---গানের , প্রাণের , সাজের , রূপের চিরায়ত বাংলা। সেই অপেক্ষাই এখন বাঙ্গালির।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৫
জেএম