ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে মণিপুরী হস্তশিল্প

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৫
সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে মণিপুরী হস্তশিল্প ছবি : রাজিব / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মণিপুরী বয়ান শিল্প হাজার বছরের পুরনো লোকশিল্প। এ শিল্প মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য।

বাংলাদেশের মণিপুরী নারীরা মণিপুরী কাপড়ে বৈচিত্র্যময় নকশা দিয়ে বয়ন তৈরি করে থাকেন। যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে। এ শিল্পের মধ্যে লুকিয়ে আছে সম্ভাবনার দরজা।

মণিপুরী নারীদের কাজে লাগিয়ে সেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে অক্সফাম ও এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) নামের দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট করে মণিপুরী বয়ন শিল্পের সৌন্দর্য ও নান্দনিকতার বিষয়টি দৃশ্যমান করতে কার্যকরভাবে মানসম্মত করার জন্য সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠান দু’টি।

উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত সাত মাসব্যাপী পরিকল্পিত কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করেছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং করে যার নাম দেওয়া হয়েছে মোইরাং।

এই হস্তশিল্পকে সবার কাছে তুলে ধরতে ৮ এপ্রিল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে প্রদর্শন করা হয় মোট সাত ধরনের পণ্য।

এগুলোরে মধ্যে রয়েছে, শাড়ি, ওড়না, খেশ (লেপের বিকল্প), মাফলার, ব্যাগ ও শাল। এছাড়াও মণিপুরী গামছা তৈরি করেছেন তাতি শিল্পীরা যা প্রদর্শনীর বাইরে রাখা হয়েছে।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মণিপুরী হস্তশিল্পীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে মণিপুরী শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতা করবে।

অনুষ্ঠানে বয়ন শিল্পের সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে যুগপোযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি বলেও উল্লেখ করেন উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা।

সাত মাসের এ প্রজেক্টে ১শ’ জনের মধ্যে মোট ৫৮ জনকে বাছাই করা হয় পণ্য উৎপাদন করার জন্য। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ পাঁচজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সম্মননা পাওয়া হস্তশিল্পীরা হলেন, বিচিত্রা হামোম, শান্তনা দেবী, রুমা দেবী, উষা দেবী ও সবিতা দেবী।

বয়ন শিল্পের সঙ্গে জড়িত মণিপুরী নারীদের সার্বিক কল্যাণে ও বয়ন শিল্পের উন্নয়নে কিছু সুপারিশও এ প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে-
•         বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রদান
•         হস্তশিল্পীদের প্রযোজনীয় উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
•         পণ্যের বাজারজাতকরণে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করা
•         প্রচার ও প্রসারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেলার আয়োজন করা।

প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈকত বিশ্বাস জানান, মোইরাং মূলত একটি মন্দির। মোইরাংয়ের আঙ্গিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে এ পণ্যগুলো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মণিপুরী তাত শিল্পীরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তারা ন্যায্য মূল্য পায় না। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা তাদের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।

বর্তমানে মণিপুরী নারীদের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম বয়ন শিল্পকে আধুনিক করে তুলে ধরতে কাজ করছেন প্রজেক্ট কনসালটেন্ট চন্দ্র শেখর সাহা।
তিনি বলেন, মণিপুরী শিল্পীদের কাজের স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি সে বিষয়ে আগ্রহ ছিলো তাদের মধ্যে। ফলেই এতোদূর আসতে পেরেছে মণিপুরী শিল্প। তাছাড়া আমার কাজের দিক থেকে শতভাগ স্বাধীনতা নিয়ে আমি কাজ করতে পেরেছি।

তৈরির উপকরণ ও কৌশল

ফ্রেম তাঁত ও কোমড় তাঁত এ দুই পদ্ধতিতে এই পণ্য তৈরি করা হয়। ফ্রেমের মাধ্যমে যে পণ্যগুলো তৈরি করা হয় তাকে ফ্রেম ও কোমড়ের সঙ্গে বেঁধে যে পণ্য তৈরি করা তাকে কোমড় বলা হয়। পিওর কটন সুতা ব্যবহার করে এসব পণ্য তৈরি করা হয়। কোমড় তাতে উল ও কটন মিক্স সুতা ব্যবহার করা হয়।

এভাবেই কাপড় বুনিয়ে বাংলাদেশের মণিপুরী নারীরা স্বকীয়তা অর্জন করেছেন। তাদের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের নজরকাড়া হস্তশিল্প সুখ্যাতি অর্জন করেছে। তবে মানসম্মত এই হস্তশিল্পের সুখ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সমাদৃত হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

** মণিপুরী শিল্পকে এগিয়ে নিলে এগিয়ে যাবে দেশ

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৫
জেডএফ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।