ঢাকা: বৈশাখে বাঙ্গালিয়ানায় প্রতিবারই যোগ হয় টুকটাক নতুন ফ্যাশন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
বসুন্ধরা সিটি ও এর ‘দেশীদশ’, আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট-গাউছিয়া, আড়ং, নবরূপা, গুলশানের শপিং সেন্টারগুলো ঘুরে সে প্রমাণই পাওয়া গেছে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা আলাপে জানান, মানুষ এখন অনেক বেশি ফ্যাশনপ্রিয় ও পোশাকসচেতন। আর পোশাকে রুচি ও নতুনত্বের পাশাপাশি স্বস্তিটাও চান সবাই। তাই বৈশাখের প্রথম দিনটিতে রোদ-গরমে নাকাল হতে রাজি নন কেউ। তাই সাজ-পোশাকও বেছে নিচ্ছেন আরাম ও স্বস্তির দিকটা মাথায় রেখে।
ডিজাইন-ফিউশন!
শাড়ি ও সাধারণ থ্রি-পিসে চুড়িদার বা পাজামা শুধু নয়, সিঙ্গেল কামিজ ও ফতুয়ার সঙ্গে এবার প্লাজ্জো, ধুতি, লেগিংস বিক্রি বেড়েছে। বাহারি ওড়না মিলিয়ে যে কারও সাচ্ছন্দ্যের অনুষঙ্গ হবে এগুলো। স্কার্ট দেবে গরমে আরাম।
এবারের বৈশাখে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরাই দেখাবেন এমন ফিউশন।
ছেলেরা পাঞ্জাবী, ফতুয়া-কাতুয়ার পাশাপাশি টি-শার্টও নিচ্ছেন। প্যান্ট, পাজামার যেমন বিক্রি চলছে, ধুতিও নিচ্ছেন কেউ কেউ, সঙ্গে নিচ্ছেন গামছা, পছন্দ করছেন কোটিও-- জানান বসুন্ধরা সিটির ‘রঙ’-এর ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম হীরা।
ইনফিনিটি, বিবিয়ানা, নাগরদোলা ও আজিজ মার্কেটের দোকানগুলোসহ রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানেই পাবেন সেগুলো।
সুতি চাই, কেউ আবার হাফসিল্ক
বৈশাখী কালেকশনে সুতি কাপড়ের প্রাধান্য থাকছে এবারও। কটনের মধ্যেই কিছু মিশ্রণ দিয়ে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।
আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে পরতেই সুতিটা নিতে চান সবাই- বাংলানিউজকে বলেন বসুন্ধরায় ইনফিনিটি’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, ক্রেতারা সুতির মধ্যেই খুব আরামের পোশাক নিতে চান। সে চেষ্টাই রয়েছে আমাদের শাড়ি, পাঞ্জাবী, থ্রি-পিসসহ সব কাপড়ে।
‘সঙ্গে হাফসিল্কও নিচ্ছেন কেউ কেউ নিজেকে কিছুটা এক্সক্লুসিভ দেখাতে’- বাংলানিউজকে বলেন নাগরদোলার ম্যানেজার নুসরাত জাহান।
নুসরাত বলেন, ক্রেতারা সুতির মধ্যেই বেশি নিচ্ছেন এবারের বৈশাখী পোশাক। কেউ কেউ হাফসিল্কটা নিচ্ছেন নিজেকে আলাদা একটা লুক দিতে, কেউ কেউ আবার বৈশাখের পরেও পোশাকটি যেন পরতে পারেন সে চিন্তা মাথায় রেখে পোশাক কিনছেন।
আড়ং, ইনফিনিটি, নাগরদোলা ও বিবিয়ানায় পাওয়া যাবে সুতির সঙ্গে হাফসিল্কও।
এর পাশাপাশি লিলেনের কাপড় বিক্রি হচ্ছে বুটিক হাউজগুলোতেও।
সাদা-লালের জগতে এলো মাল্টিকালার
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই জানাচ্ছেন, জনপ্রিয়তা তো রয়েছেই লাল-সাদার। বৈশাখেও এর প্রাধান্য থাকবে। তবে এবার মাল্টিকালার (বহুরঙা) পোশাকের বেশ কাটতি রয়েছে।
বিশেষ করে নারীক্রেতারা জুতা-গয়না ও ব্যাগের সঙ্গে মিলিয়ে পরার সুবিধা পেতে বেছে নিচ্ছেন মাল্টিকালার পোশাক। এছাড়া বৈশাখের একটি দিন শুধু নয়, পরেও যেন পরতে পারেন-- পোশাক কেনাকাটার সময় ক্রেতারা সুদূর প্রসারি চিন্তা মাথায় রাখছেন বলে জানালেন নাগরদোলার ম্যানেজার নুসরাত।
লাল, সাদা, খয়েরি, মেরুনের পাশাপাশি পার্পল, হলুদ, কমলা, সবুজ, বেগুনীসহ বিভিন্ন রঙের হালকা ও গাঢ় শেড পছন্দ করছেন ক্রেতারা জানান তিনি।
পুরান ঢাকা থেকে মায়ের সঙ্গে বৈশাখের কেনাকাটা করতে এসেছেন শুচিতা রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আম্মু সাদা পোশাক পছন্দ করে না। ময়লা হয়ে যায় তো! তাই এবার মাল্টিকালার জামা নিচ্ছি। সিঙ্গেল কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে প্লাজ্জো পরবো, সঙ্গে ছাপার ওড়না। বৈশাখ চলে গেলেও পরে ভার্সিটিতে পরতে পারবো।
বিবিয়ানায় ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দের পোশাকটি খুঁজছেন মিরপুর থেকে আসা রোদেলা রিদি ও তার বন্ধুরা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবার বন্ধুরা সবাই মিলে ঠিক করেছি নানা রঙের কাপড় নেব-চক্রাবক্রা। ম্যাচ করতে সুবিধা। ছোট কামিজ, ধুতি ও ছোট ওড়না নিয়ে গলায় প্যাঁচাবো। ইচ্ছেমতো ঘোরা যাবে।
বৈশাখকেন্দ্রিক মাল্টিকালার পোশাক এবার প্রায় সব বিপণিবিতানেই এসেছে।
গুলশানের অভিজাত দোকান জারা’য় বৈশাখী পোশাকে রয়েছে মেয়েদের প্রাধান্য। তবে পোশাকে জমকালো ভাব রয়েছে, যা রাতের অনুষ্ঠানে বেশ মানিয়ে যায়। এছাড়া পরেও যেকোনো বিয়ে বা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার উপযোগী পোশাক রাখা হয়েছে। তাই জর্জেট কাপড়ের ব্যবহারও রয়েছে।
বাবার মতো ছেলে, মায়ের মতো মেয়ে
কয়েকটি হাউজ কয়েক বছর ধরেই পরিবারের সব সদস্যের একই সাজের ব্যবস্থা রাখছে উৎসবগুলোতে। বাবা-ছেলে, মা-মেয়ের একই রঙ ও ডিজাইনের পোশাকটি নেওয়া যাবে পছন্দসই মাপে।
ইনফিনিটি’র হারুনুর রশিদ বলেন, এটি অনেকেই পছন্দ করে। যেকোনো উৎসবে একই সাজে পুরো পরিবার বের হলে বেশ চোখে লাগে। তাই অনেকেই আমাদের এ কালেকশনগুলো পছন্দ করেন। ছয় মাসের শিশু থেকে ৮০ বছরের প্রবীণ--সবার জন্যই রয়েছে আমাদের বৈশাখী আয়োজন।
পোশাকে ঐতিহ্যের পাঠ
বলাই বাহুল্য, বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। তাই পোশাকে তুলে ধরা হয়েছে বর্ষপঞ্জী, বর্ণমালা, পতাকা, গ্রামীণ জীবনযাত্রার চিত্র, টাট্টুঘোড়া, হাতপাখা, কুঁড়েঘরসহ বাংলাদেশের নানান ছবি।
গয়না, জুতো, ব্যাগের ফিউশন
পোশাকের মতোই গয়না, জুতো, ব্যাগেও এসেছে মাল্টিকালারের জনপ্রিয়তা।
বসুন্ধরার মমতাজ ইমিটেশন জুয়েলারির সেলস এক্সিকিউটিভ রুবিনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, শুধু লাল বা সাদা নয়, বরং বিভিন্ন রঙের চুড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। উজ্জ্বল রঙের ফুলের ডিজাইনের কানের দুল পছন্দ করছেন তরুণীরা।
পোশাক মাল্টিকালার হলে ব্যাগ-জুতো একরঙা, আর পোশাক একরঙা হলে ব্যাগ-জুতো বিভিন্ন রঙা নিচ্ছেন কেউ কেউ।
দরদাম
বৈশাখের সুতি শাড়ি ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, একটু বেশি কারুকাজের হলে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত, হাফসিল্ক শাড়ি ৪০৯০ টাকার মধ্যে, থ্রি-পিস ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, ফতুয়া ৫৬০ থেকে ১২০০ টাকা, সিঙ্গেল কামিজ ৮৫০ থেকে ২৫০০ টাকা, প্লাজ্জো ৪৫০ থেকে ৯০০ টাকা, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ১২০০ থেকে ১৫৫০ টাকা, লেগিংস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, ধুতি ৪৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবি ৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা, একটু কাজ বেশি হলে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত, টি-শার্ট ২৮০ থেকে ৫০০ টাকা, ফতুয়া ৫০০ টাকা, কাতুয়া ১৮০০ টাকা সর্বোচ্চ, প্রিন্স কোট ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা, পাজামা ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, ধুতি ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে পাওয়া যাবে।
বাজার ঘুরে পছন্দের পোশাকটি মনের মতো দামে না পেলেও চিন্তা নেই, রয়েছে সেলাই দিদিমণিরা। তাই চাইলেই পহেলা বৈশাখের দিনটি হয়ে উঠতে পারে বছরজুড়ে শ্রেষ্ঠ স্মৃতির।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০,২০১৫
জেএম