ঢাকা: ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীর্ষ ঋণখেলাপিদের একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
চিঠির সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্যের একটি ছকও দেওয়া হয়েছে। এ তথ্য দিতে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ছকের হালনাগাদ করার প্রয়োজন হয়, তবে সে পরিবর্তন এনে তথ্য সরবরাহ করার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান তার বক্তব্যে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণ জানতে চান। এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করারও দাবি জানান তিনি।
এরপর ঋণখেলাপিদের নিয়ে খবরের কাগজে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে চিঠি দিয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণখেলাপিদের বিস্তারিত প্রতিবেদন সরবরাহ করতে বলেন।
অর্থমন্ত্রীর পাঠানো চিঠিতে ঋণখেলাপিদের তালিকা ও তাদের ঋণ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- সংশ্লিষ্টদের কত টাকা খেলাপি ঋণ আছে, তাদের ঋণের আসল ও সুদের অংক কত, কতবার ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন, প্রতিবারে কত সুদ মওকুফ পেয়েছেন, কখনো ঋণখেলাপি অবস্থান থেকে তার উত্তরণ হয়েছে কি-না ইত্যাদি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রীর পাঠানো চিঠিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্যও রয়েছে। অতিরিক্ত কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করে অর্থমন্ত্রীকে সরবরাহ করা হবে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বাংলানিউজকে বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এর আগেও খেলাপি গ্রাহকদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর আর প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। কারণ ঋণখেলাপিদের হাত অনেক লম্বা। এবারও হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্তদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকগুলোকে এসব ঋণ নিয়মিত তদারকির মধ্যে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্যই শীর্ষ ঋণখেলাপিদের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা।
২০১৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১২ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ওই বছর ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৫
এসই/আরএম/আইএ