ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সেকেন্ড হোমে রেজিস্ট্রেশনের ‘হিড়িক’

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৫
সেকেন্ড হোমে রেজিস্ট্রেশনের ‘হিড়িক’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সেকেন্ড হোমে রেজিস্ট্রেশন ফি ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেলায় রেজিস্ট্রেশনে বুকিং দিলে লাগবে দেড় লাখ টাকা।

দু’দিনে প্রায় তিন শতাধিক বুকিং হয়ে গেছে।
 
এসব বলছেন আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় টিএইচআর ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিস’র কাস্টমার রিলেশন অফিসার সাবিহা রশিদ।
 
রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘মনিটর ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৫’ শীর্ষক তিনদিনের (৯-১১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা চলছে।
 
সাবিহা রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সেকেন্ড হোম রেজিস্ট্রেশন এখন ওপেন সিক্রেট। সেকেন্ড হোম সম্পর্কে জানার চেয়ে ছাড়ে বুকিং দিতে আসছেন বেশি।
 
সাবিহার বর্ণনায়, মালয়েশিয়া সরকারের বিশেষ প্রোগ্রামের সুযোগে বেশ কয়েক বছর ব্যবসায়ি, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ, সরকারি চাকুরিজীবী মালয়েশিয়া গিয়েছেন।
 
তিন মাসে ভিসা প্রসেসিং। আবেদনে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার (৫ লাখ মালয়েশিয়া রিংগিত) ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে। মাসিক আয় থাকতে হবে আড়াই লাখ টাকা (১০ হাজার রিংগিত)।

অথবা সমপরিমাণ টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ রয়েছে তার কাগজপত্র দেখাতে হবে। ভিসা হয়ে গেলে ৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে পারবেন।
 
টাকা পাঠানো সম্পর্কে সাবিহা বলেন, ভিসা হয়ে গেলে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে দেড় লাখ রিংগিত (৫০ হাজার ডলার) দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট (স্থায়ী আমানত) খুলতে হবে।
 
এ টাকা হুন্ডি, বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়-ব্যবসায়ির মাধ্যমে পাঠাতে হবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনুসারে ৫ হাজার ডলারের বেশি অর্থ পাঠানো যায় না।
 
থাকবে না ট্যাক্স, পাওয়া যাবে ইন্টারেস্ট। একবছর পর গাড়ি, প্রোপাটি, ব্যবসা আরম্ভ করতে স্থায়ী আমানতের ৫০ শতাংশ ও দ্বিতীয় বছর ৩০ শতাংশ উত্তোলন করা যাবে।
 
সাবিহা বলেন, দেশ থেকে সরাসরি টাকা পাঠানো নিষেধ বলে ‘হুন্ডির’ মাধ্যমে পাঠাতে পারেন। সবাই তো এভাবে টাকা পাঠায়।
 
যেকোন দেশে আত্মীয়-স্বজন থাকলে বাংলাদেশে তাদের একাউন্টে টাকা দিয়ে দিলে সে মালয়েশিয়ায় দিয়ে দেবে। কেউ কেউ কোটি রিংগিত ও নিয়ে যায় দাবি সাবিনার।
 
সাবিহার বর্ণনায় সুবিধা সমূহ, ১০ বছরের  মাল্টিপল ভিসা ও পরে মেয়াদ বাড়িয়ে আজীবন, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি ক্রয়, ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে চিকিৎসাসেবা।
 
সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও চাকুরি সুবিধা, বিনা সুদে ৬০-৮০ শতাংশ ঋণ, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াতসহ নানাবিধ সুবিধা।
 
খায়রুল কবির নামের এক ব্যবসায়ি পরিচয়দানকারী প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন শেষে বাংলানিউজকে বলেন, টাকা তো অহরহ পাচার হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। রেজিস্ট্রেশনের যেন হিড়িক পড়েছে। প্রকাশ্যে দেশের টাকা পাচার হচ্ছে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার, বিভিন্ন সংস্থা নিরব রয়েছে।
 
ম্যাক্সিমাস বিডি ইমিগ্রেশন সার্ভিস সেলস এক্সিকিউটিভ সুমাইয়া খন্দকার বাংলানিউজকে জানান, টাকা পাঠাতে সমস্যা হলে আমরাই ব্যবস্থা করে দেই।
 
তিনি বলেন, সুবিধা এত বেশি যে কিছুদিন আগেও এক বাংলাদেশি (আমেরিকান নাগরিক) সেখান থেকে বাংলাদেশে এসে রেজিস্ট্রেশন করে বর্তমানে মালয়েশিয়া।
 
সুমাইয়া বলেন, ১৩ হাজার রেজিস্ট্রেশনের পর সে দেশের সরকার এ সুবিধা বন্ধ করে দেবে, দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করার অনুরোধ জানান তিনি।
 
গার্ডিয়ান নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. শংকর চন্দ্র পোদ্দার বলেন, আমিই প্রথম মালয়েশিয়া সরকার থেকে সেকেন্ড হোম রেজিস্ট্রেশন এনেছি।
 
পোদ্দার বলেন, টাকা নয় ভিসাই বড় জটিলতা। টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বেশি যায়। অথবা কোন আত্মীয় বিদেশ রয়েছে। দেশে তার একাউন্টে দিলে সে ওই দেশে দিয়ে দেবে।
 
প্রকাশ্যে দেশের টাকা সেকেন্ড হোম’র নামে বিদেশে পাচার যৌক্তিক কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সহযোগিতা করি, অহরহ তো চলে যাচ্ছে।
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, সেকেন্ড হোমে বাংলাদেশ তৃতীয়। ২০০৩ সাল থেকে প্রায় চার হাজারের বেশি বাংলাদেশি এ সুবিধায় সেদেশে বসবাস ও বিনিয়োগ করেছে।
 
সেকেন্ডে হোমে মালয়েশিয়ায় এক দশকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। পুরো অর্থই পাচার হয়েছে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ অনুযায়ী বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি কেনার নামে অর্থ পাচারের সুযোগ নেই।
 
এনবিআর’র সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্ট সেল’র (সিআইসি) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, সেকেন্ড হোম বিষয়ে কাজ করছে সিআইসি।
 
মেলা করে প্রকাশ্যে মানুষকে সেকেন্ড হোমের নামে টাকা পাচারে উৎসাহিত করার হিড়িক বন্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৫
আরইউ/কেজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।