ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যয় বৃদ্ধি ১৬০৭ কোটি

সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৫
সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল!

ঢাকা: চীনের বাণিজ্য নগরী সাংহাইয়ের ‘One City two Town’ এর আদলে গড়ে তোলা হবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে।

এ ধরনের উন্নয়ন কাজ এবারই বাংলাদেশে প্রথম হতে যাচ্ছে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে কয়েক দফা ‘কন্সট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেতু বিভাগের প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আরাস্তু খান সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চীনের সাংহাইয়ের আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে। বর্তমানে চালু দু’টি ব্রিজের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ কমানো এবং সাংহাইয়ের আদলে `One City two Town’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা-চট্রগ্রাম-কক্সবাজারের জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।

এই প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বাংলানিউজকে বলেন, সেতু বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কয়েকটি সভা করেছি।

সেতু বিভাগ প্রথমে ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা চেয়েছিলো। তারা অতিরিক্ত ১ হাজার ৬শ’ ৭ কোটি টাকা চায়। এর ফলে আরও কয়েকটি সভা করতে হবে। কারণ প্রকল্পের টাকার সংস্থান আগে ঠিক করতে হবে। তবে প্রকল্পটি হওয়া দরকার। এর মাধ্যমে চীনের

সাংহাইয়ের আদলে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। চটগ্রামের দু’পাশে বর্তমানে চালু দু’টি ব্রিজের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ কমানো যাবে। এছাড়া এখানে দেশের সর্ববৃহৎ ৬শ' মেগাওয়াট করে ১২শ' মেগাওয়াটের দুটি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। সুতরাং কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করা দরকার। চট্টগ্রামে আমাদের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী। গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ। ’

বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানির মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণের কারিগরি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়।

সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে প্রকল্পের ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন (জিওবি) এক হাজার ৪শ’৬০ কোটি এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির(জাইকা) ঋণ ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।

তবে বৈঠকে সেতু বিভাগের প্রস্তাবের প্রকল্পের ব্যয় অতিরিক্ত ১ হাজার ৬০৭ কোটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে করে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকা। চূড়ান্ত ব্যয়ের ২ হাজার ২৩৫ কোটি সরকারি খাত থেকে এবং জাইকার ঋণ থেকে আসবে ৪ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি হাতে নেওয়া প্রসঙ্গে সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, চট্রগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদীর মাধ্যমে দুইভাগে বিভক্ত। মূল শহর এবং বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত অন্যদিকে ভারী শিল্প এলাকা পূর্বপাশে অবস্থিত।

বর্তমানে সচল দু’টি ব্রিজের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যানচলাচল সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী নদীতে অন্য কোন ব্রিজ নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে টানেল(সুরঙ্গ) নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য ১৮ দশমিক ২০ হেক্টর জমি ও অন্যান্য খাতে আরও এক হাজার কোটি টাকা প্রয়োজনের জন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। ’

সেতু বিভাগ সূত্র আরও জানায়, টানেল নির্মাণ করা হলে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে নতুন নতুন শিল্প কারখানার বিপ্লব সৃষ্টি হবে। তাছাড়া, ভবিষ্যতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে বিধায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প প্রসঙ্গে ভূতাত্ত্বিক অধিদফতরের এক প্রতিনিধি বাংলানিউজকে বলেন, কর্ণফুলী নদীতে প্রস্তাবিত টানেল নির্মাণের স্থানের ভূ-অভ্যন্তরের মাটির প্রকৃতি, পলি জমার প্রবণতা জানতে জিও-সাইন্টিফিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসেমেন্ট(জিআইএ) সার্ভে করা প্রয়োজন। ’ এছাড়া সেখানে কোনো অ্যাকটিভ জিওলজিক্যাল ফল্ট থাকতে পারে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করার সময় বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। টানেলের বিষয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে  এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন ডিপিপি’তে যোগ করা হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পের জন্য সরকারি অর্থায়নে একজন বৃটিশ পরামর্শককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম হবে বাংলাদেশের সাংহাই।   তবে বৃটিশ পরামর্শক নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে।

এই বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এর মধ্যেই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। প্রকল্পটি যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সেইভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ’ তবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি সচিব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৫
এমআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।