ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়নে ৮০ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণের মধ্যে ৭০ কোটি ডলারই রেলখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। এই ঋণে যে ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তার ১৪টি রেল সংক্রান্ত।
ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান। অবশিষ্ট ৮০ কোটি ডলারের মধ্যে ৭০ কোটি ডলার রেলখাতে খরচ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নতুন করে আরও ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চায় ভারত। তবে এবার প্রকল্প দেখেই ঋণ দেবে ভারত। সেই লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে দেশের সকল মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। এবার আগে প্রকল্প দেখবে পরে সেই প্রকল্পে ঋণ দেবে ভারত।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় ঋণে রেলে নানা ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব করলেই আমরা একনেক সভায় পাশ করে দিচ্ছি। ভারতীয় নতুন ঋণে বিদ্যুৎ ও সড়কে বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
ইআরডি এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। ওই বছরেরই ৭ আগস্ট দেশটির এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে ইআরডির ঋণচুক্তি হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত নতুন ঋণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প আসা শুরু হয়ে গেছে। সড়ক ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আরও প্রকল্প হাতে এলে পরে সেই প্রকল্পগুলো ভারতীয় প্রতিনিধিকে দেখানো হবে এর পরেই ঋণ চুক্তি হবে।
একমাত্র ৩০০টি ডেকার, ডাবল ডেকার এসি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয় শীর্ষক প্রকল্পটি ব্যতিক্রম। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ৪৩ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তারমধ্যে ভারতীয় ঋণ ৩৬ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এই প্রকল্পটির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
রেলে ভারতীয় ঋণে শেষ হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৮১টি বগি ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্প অন্যতম। এই প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ ৭ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় ১১ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১০ লোকোমোটিভ সংক্রান্ত প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ ৩৩ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় ৪৬ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরই মধ্যে সব ক’টি লোকোমোটিভ দেশে এসেছে।
১৬৫ ব্রডগেজ (বিজি) ট্যাংক ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ ১৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় ২৫ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সব ক’টি ওয়াগন সরবরাহ করেছে ভারত।
প্রকিউরমেন্ট অব ১৬ লোকোমোটিভ প্রকল্পের আওতায় সবগুলো লোকোমোটিভ এসেছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৬০ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১৭০ ফ্ল্যাট ওয়াগন সংক্রান্ত প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এর মোট ব্যয় ১৫ দশমিক ০৯ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ১০ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এছাড়া ৫০টি এমজি ফ্ল্যাট ওয়াগন ও ৫টি এমজি ভ্যান এয়ার ব্রেক কনটেনার সংগ্রহ প্রকল্পের কাজও শতভাগ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৩ দশমিক ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৭টি প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ ১৬৯ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পে ৩১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় ঋণ ব্যবহার করা হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ফিজিবিলি স্টাডিসহ খুলনা হতে মংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই ব্যয় বাড়ছে। সংশোধিত প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে রেলওয়ে। সংশোধিত ডিপিপি’তে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে জুন ২০১৮ সাল পযর্ন্ত। প্রথমে রেলপথ নির্মাণের মোট দৈর্ঘ্য ছিল ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। কিন্তু বর্তমানে এর মোট দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। ইআরডি সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে। চলতি বছরেই ভারতের সঙ্গে ৩১০ মিলিয়ন ঋণ চুক্তি সম্পূর্ণ হবে। এতে করে ৮০০ মিলিয়নের মধ্যে ভারতের সঙ্গে ঋণ চুক্তির পরিমাণ দাঁড়াবে ৬৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাকি ১৩৯ মার্কিন ডলার দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে নৌ-মন্ত্রণালয়ের আওতায় মংলা পোর্টে প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ দিকে।
চলমান রয়েছে ১২০ বিজি কোচ সংগ্রহ প্রকল্প। এতে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ৯৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৩০ দশমিক ৫৯ মার্কিন ডলার। প্রকল্পের আওতায় ভারত থেকে কোচ কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৩ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ৫৪ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ হয়ে গেলেই ভারতের সঙ্গে ঋণচুক্তি সম্পূর্ণ হবে।
বিএসটিআই কে আধুনিক ও শক্তিশালী করতে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারত। চলতি অর্থবছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
ঢাকা-টঙ্গি রুটে তৃতীয় এবং চতুর্থ ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ, ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে বিদ্যমান মিটার গেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে ভারতীয় ঋণ ১২৩ দশমিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের আওতায় কনসালটেন্ট নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। এর পরেই ঋণ চুক্তি হবে।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া রেলপথের সিগনালিং পদ্ধতি আধুনিকায়নের জন্যও ৩ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় ঋণ দেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, ৮টি চলমান প্রকল্পের মধ্যে কিছু প্রকল্পে টেন্ডারিং চলছে ও কিছু প্রকল্পে কনসালটেন্সি নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া নতুন করে আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে ভারত। তবে এর আগে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৫
এমআইএস/কেজেড