ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিমা কোম্পানির ১৮৫ কোটি টাকা ভ্যাট জমা

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
বিমা কোম্পানির ১৮৫ কোটি টাকা ভ্যাট জমা

ঢাকা: ভ্যাট বাবদ ২০১৪ সালে সরকারি কোষাগারে ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে দেশে ব্যবসা করা ৪৫টি সাধারণ বিমা কোম্পানি। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেশি।



তবে আইন মেনে বিমা কোম্পানিগুলো ভ্যাট পরিশোধ করলে টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতো বলে মনে করছেন বিমা সংশ্লিষ্টরা।
 
আইন অনুযায়ী, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম আয়ের উপর ১৫ শতাংশ হারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) কাছে ভ্যাট জমা দিতে হয়।
 
কোম্পানিগুলোর জমা দেওয়া ভ্যাটের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে সব থেকে বেশি ভ্যাট দিয়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের বছর এর পরিমাণ ছিলো ২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
 
এর পরের স্থানে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট দেয় ১৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
 
১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়ে এর পরের স্থানেই রয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স। আর চতুর্থ স্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্স দিয়েছে ১২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে পাইওনিয়ার ভ্যাট দেয় ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং প্রগতি ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা।
 
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের(বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শুধু বিমা কোম্পানি না বাংলাদেশের সব খাতের কোম্পানিই ভ্যাট ফাঁকি দেয়। কেউ সঠিক ভাবে সরকারকে ভ্যাট দেয় না। হয়তো বিমা খাতের ফাঁকির পরিমাণ বেড়েছে।

তবে আমার মনে হয় বিমা কোম্পানিগুলো খুব বেশি ফাঁকি দেয় না। কারণ অতিরিক্ত ভ্যাট ফাঁকি দিলে ধরা পড়ে যাবে।
 
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য জুবের আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো ব্যবসার প্রকৃত তথ্য এনবিআর’র কাছে জমা দিলে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই কোম্পানি প্রিমিয়াম আয়ের সঠিক তথ্য দিচ্ছে কি না তা এনবিআরকে খতিয়ে দেখা উচিত।
 
আইডিআরএ’র এই সদস্য বলেন, বিমা কোম্পানির অনিয়ম বন্ধে আইডিআরএ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বাকিতে ব্যবসা বন্ধ করায় সাধারণ বিমা কোম্পানির আয় বেড়েছে। আগে বাকিতে যে ব্যবসা হতো তার টাকা আর কোম্পানিতে যোগ হতো না। কোম্পানির এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা গ্রাহকের সঙ্গে যোগসাজশে এ টাকা খেয়ে ফেলতেন। এখন এটি বন্ধ হয়েছে। এতে সরকারের ভ্যাট আয়ও বাড়বে।
 
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন অনুমোদন পাওয়া‍ দুটি কোম্পানিই ২০১৪ সালে কোটি টাকার উপর ভ্যাট দিয়েছে। এর মধ্যে সিকদার ইন্স্যুরেন্স দিয়েছে দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স দিয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা।
 
৫ কোটি টাকার উপরে ভ্যাট দেওয়ার তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রূপালী ইন্স্যুরেন্স সাত কোটি আট লাখ, নিটল ইন্স্যুরেন্স সাত কোটি এক লাখ, বাংলাদেশ জেনারেল ৫ কোটি ৩১ লাখ, ইস্টল্যান্ড ৫ কোটি ৮০ লাখ ও রিপাবলিক ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারকে দিয়েছে।
 
গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স’র উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আগের বছরের তুলনায় ২০১৪ সালে আমাদের ব্যবসা সামান্য বেড়েছে। যে কারণে ভ্যাটের পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। তবে আমরা ভ্যাট ফাঁকি দেইনি। অন্য কোম্পানি ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে কি না তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোন কোম্পানি ফাঁকি দিয়ে থাকলে তার দায়-দায়িত্ব তার। একদিন না একদিন তাকে ধরা পড়তেই হবে।
 
তিনি বলেন, অনেক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু আমাদের কোম্পানিতে এ ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। যে কারণে আমাদের ব্যবসা খুব একটা বাড়েনি।
 
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৩ কোটির উপরে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে পিপলস চার কোটি ৩২ লাখ, ফিনিক্স চার কোটি ৬০ লাখ, কন্টিনেন্টাল ৪ কোটি ২লাখ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ৪ কোটি ৩৩ লাখ, তাকাফুল ৩ কোটি ৪৩ লাখ, ফেডারেল ৩ কোটি ২ লাখ, প্রাইম ৩ কোটি ৬ লাখ, ইউনাইটেড ৩ কোটি ৩৯ লাখ, এশিয়া ৩ কোটি ৭৮ লাখ ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্স ৩ কোটি নয় লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে।
 
অপরদিকে ২০১৪ সালে সরকারকে সব থেকে কম ভ্যাট দিয়েছে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ। প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট দিয়েছে ১২ লাখ টাকা। এছাড়া কোটি টাকার নিচে ভ্যাট দেওয়ার মধ্যে পূরবী জেনারেল ২৩ লাখ, দেশ জেনারেল ৪৭ লাখ, প্যারামাউন্ট ৭৫ লাখ, ইউনিয়ন ৫৫ লাখ ও সাউথ এশিয়া ১৫ লাখ টাকা দিয়েছে।
 
অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ২ কোটি ৪১ লাখ, সেন্ট্রাল ২ কোটি ৯৭ লাখ, সিটি জেনারেল ২ কোটি ৩৩ লাখ, ইস্টার্ন ২ কোটি ৫৬ লাখ, কর্ণফুলী ২ কোটি ৫৮ লাখ, নর্দান জেনারেল ২ কোটি ৭০ লাখ, প্রভাতী ২ কোটি ৬৬ লাখ, ক্রিস্টাল ২ কোটি ৫৭ লাখ, এক্সপ্রেস ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সরকারকে ভ্যাট দিয়েছে।
 
এছাড়া গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স এক কোটি ৩৮ লাখ, ইসলামী কমার্শিয়াল এক কোটি ৯১ লাখ, সোনার বাংলা এক কোটি ৯ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড এক কোটি ৪৬ লাখ, জনতা এক কোটি ৯৩ লাখ, মেঘনা এক কোটি ৯২ লাখ, মার্কেন্টাইল এক কোটি ৯৮ লাখ, অগ্রণী এক কোটি ৬৭ লাখ ও এশিয়া প্যাসিফিক এক কোটি ২১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জামা দিয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এএসএস/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।