ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অল্প পুঁজি স্বল্প শ্রম, লাভ বেশি স্ট্রবেরিতে

টি. এম মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
অল্প পুঁজি স্বল্প শ্রম, লাভ বেশি স্ট্রবেরিতে ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

বগুড়া: অল্প পুঁজি, স্বল্প শ্রম কিন্তু লাভ বেশি। এসবগুলো বিশেষণই যায় স্ট্রবেরি চাষের সঙ্গে।

এ ফল চাষে অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখেছেন বগুড়ার অনেক কৃষক।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী অল্প পুঁজিতে লাভজনক ফলের মধ্যে প্রথম দিকে রয়েছে স্ট্রবেরি চাষ। এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় ঝুঁকিমুক্ত বলে স্ট্রবেরি চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, জেলার সদর উপজেলা, গাবতলী, ধুনট, দুপচাচিয়া ও নন্দীগ্রাম উপজেলার বেশ কিছু এলাকার জমিতে স্ট্রবেরি চাষে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

তিনি জানান, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে প্রায় ৪৭ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে বগুড়ায় ৩৪ হেক্টর, জয়পুরহাটে ১১ হেক্টর, পাবনায় দশমিক ৫৫ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে ১.০৪ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে।

তিনি বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চারা রোপন করে মার্চ-এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ ও খাওয়ার উপযুক্ত ফল পাওয়া যায়। আলু, ধান ও অন্য যেকোন ফলের চেয়ে লাভজনক এ ফসল উৎপাদনে খরচ হয় বিঘা প্রতি ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন ফল। বাজারে প্রকার ভেদে এক কেজি স্ট্রবেরির পাইকারি বাজার দাম ৫০ থেকে ৭৫ টাকা। খুচরা বিক্রয়মূল্য যেখানে ৭০ থেকে একশ’ টাকা পর্যন্ত।

বগুড়া শহরের ফল ব্যবসায়ী জ্যোতি ফল ভাণ্ডারের সত্ত্বাধিকারী মো. মিজানুর রহমান মঞ্জু জানান, ২/৩ বছর আগেও বগুড়ায় দৈনিক দুই থেকে তিন মণ স্ট্রবেরি বাজারে আমদানি হতো। যা কেবল বগুড়া জেলায় উৎপাদন হত। তখন এক কেজি পাইকারি স্ট্রবেরি বিক্রি হত ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। এখন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ মণ স্ট্রবেরি আমদানি হওয়ায় প্রতিদিন এর বাজার দাম কমে যাচ্ছে। বর্তমানে এমনও জাতের স্ট্রবেরি রয়েছে, কেজি প্রতি যার পাইকারি দাম ৩০ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক চন্ডিদাস কুণ্ডু ও বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ফজলে এলাহী বাংলানিউজকে জানান, স্ট্রবেরিকে এখনও পূর্ণাঙ্গ উপকারী ও সুস্বাদু ফল হিসেবে গণ্য করা হয় না। যে কারণে এর বাজার দাম এত কমে গেছে। যখনই পূর্ণাঙ্গ উপকারী ও সুস্বাদু হিসেবে গণ্য করা শুরু হবে, তখনই এর বাজার দাম আরও বেড়ে যাবে।         

নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুশিদুল হক জানান, স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন তার উপজেলার মাটিহাঁস গ্রামের কৃষক রাজধন চন্দ্র। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই সুস্বাদু স্ট্রবেরি ফলের চাষ করছেন তিনি।

অন্যকে দেখে পীরগাছা থেকে চারা সংগ্রহ করে পরের একবিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছেন রাজধন।

রাজদন জানান, নিজস্ব চারা না থাকায় সময়মতো চারা রোপন করতে পারেননি। এরপরও সঠিক পরিচর্যা করায় ফলন এসেছে অনেক বেশি এবং ফলগুলো বেশ পরিপুষ্ট হয়েছে।

শুধু ফল বিক্রি করে অন্তত তিন লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন রাজধন।

তিনি বলেন, ‘শ্যালকের পরামর্শ নিয়ে পীরগাছা থেকে ছয় হাজার স্ট্রবেরির চারা সংগ্রহ করে একবিঘা জমিতে সেগুলো রোপন করি। চারা কেনা, চাষ, রোপন, সেচ, জাল ও ক্ষেতের বেড়াসহ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। এক কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০টি ফল ধরে। প্রথম দিকে মাঘ-ফাল্গুন মাসে কিছুটা অসময়ে (অগ্রিম) প্রতি কেজি স্ট্রবেরি দুইশ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা,  এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এসএন/কেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।