বরিশাল: শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে প্রয়োজনে জেলেদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১২টায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে জাটকা সংরক্ষণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে প্রয়োজনে এ বরাদ্দের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে। তবে প্রকৃত জেলেরা যাতে এ সুবিধা ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে এখানে উপস্থিতসহ সব জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গরীববান্ধব সরকার। সমাজের অবহেলিত, দরিদ্র, ছিন্নমুল মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমরা কাজ করছি। জনপ্রতিনিধি, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে আপনারাও আমাদের সহযাত্রী।
মন্ত্রী এসময় বিভন্ন তথ্য তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে বরিশাল বিভাগে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে শুধু বরিশালের ১০ উপজেলায় মোট ৫৪ হাজার ৬৫৩ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন।
চলতি অর্থবছরে বরিশাল জেলায় মোট ৩১ হাজার ৭১৫টি জেলে পরিবারের মধ্যে মাসে ৪০ কেজি করে ৪ মাসে পাঁচহাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৭৮টি জেলে পরিবারের জন্য মোট ২০ হাজার ৭৪৮ ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২০ হাজার ৭৪৮ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র জয় করেছি। আমাদের এ বিশাল সমুদ্র সীমানায় মৎসসহ বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতির জোরদারের স্বার্থে এ সম্পদের যথায়থ ব্যবহার করা জরুরি। বিশেষ করে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চলমান অভিযাত্রা সফল করতে সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
এক্ষেতে জনস্বার্থে যেকোন ইতিবাচক পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে এবং ভবিষ্যতে প্রকল্প ও কর্মসূচি প্রণয়নে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়াতে গৃহিত জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকরণ কর্মসূচি সফল করতে হলে গরীব মৎসজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রয়োজন রয়েছে। শুধুমাত্র আইন করে কিংবা অভিযান চালিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষকে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এর জন্য বাস্তবতার নিরিখে কার্যকর কর্মসূচি নিতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর মোট ৫ লাখ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে বাংলাদেশের অর্জন ৬০ ভাগ। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিলে ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির ফলে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টনে দাড়িয়েছে।
দেশে প্রাকৃতিকভাবে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন হয়। এটি উৎপাদনে কোনো খরচ হয়না। জাটকা নিধন বন্ধ হলে সারা বছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
সভায় বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার পর একমাত্র প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশের জেলেরা তাদের প্রাপ্ত অধিকার পেয়েছে।
জাটকা আহরণ বন্ধ মৌসুমে জেলেরা যেন ক্ষুধায় কষ্ট না পায় সেজন্য ৪০ কেজি হারে ৪ মাসের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জাটকা এখন মেঘনা হতে পদ্মা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা থাকার পরও নদ-নদীতে নির্বিচারে জাটকা আহরণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ৭টি সংস্থা জাটকা আহরণ বন্ধে অভয়াশ্রম এবং পার্শ্ববর্তী নদ-নদীতে অভিযানও পরিচালনা করে আসছে।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেলিনা আফরোজার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুস, বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, বরিশাল-৩ আসেনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদা টিপু সুলতান, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার গাউছ, বরিশাল রেঞ্জ’র ডিআইজি হুমায়ুন কবির, বরিশাল মেট্রো পলিটন পুলিশ কমিশনার শৈবাল কান্তি চৌধুরী, বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল আলম, ভোলা জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা, পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমানসহ বরিশাল বিভাগের সব জেলা-উপজেলার প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এসএইচ