বগুড়া: উর্বর মাটি ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় বগুড়ায় উৎপাদিত মরিচ নিজ জেলাসহ বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করেও প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি হচ্ছে। যে কারণে কৃষি বিভাগ মরিচকে বগুড়ার ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বহুকাল আগে থেকেই মরিচ চাষে আগ্রহী হয়েছে এ দেশের কৃষকরা। রোগ-বালাই কিছুটা কম হওয়ায় তিন মাস মেয়াদী এ ফসল অন্য অনেক ফসলের থেকে বেশি লাভজনক। জমি ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনাতেই মরিচ চাষ করে দেশের অনেক গৃহস্থ পরিবার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক চন্ডিদাস কুণ্ডু জানান, এখন চাষ পদ্ধতি অনেক উন্নত। এছাড়া কৃষকদের চাষাবাদের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক দায়িত্বশীল কৃষি বিভাগ। কৃষকদের চাহিদার পাশাপাশি নিয়মিত খোঁজ রাখছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। যে কারণে ধান ও অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচ চাষে আগের তুলনায় বেশি উৎসাহী হয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে মোট ১২ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ১.৮৭ মেট্রিক টন। এ হিসেবে এ অঞ্চলে মোট উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ মেট্রিক টন।
এরমধ্যে বগুড়া জেলায় আট হাজার চারশ হেক্টর, জয়পুরহাটে ৩৭৫ হেক্টর, পাবনায় ৭৫৪ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে তিন হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। বগুড়ার ১২টি উপজেলায় মরিচের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সারিয়াকান্দী ও ধুনট উপজেলায়।
বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ফজলে এলাহী বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে ফেব্রুয়ারিতে এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চে বীজ বপন করলে এপ্রিল-মে মাসে শুকনা মরিচ ঘরে তোলা যায়।
তিন মাস মেয়াদী এ ফসল উৎপাদনে একর প্রতি সর্বোচ্চ খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। প্রতি একরে উৎপাদন হয় চার টন শুকনা মরিচ।
জেলার ধুনট উপজেলার ঈশ্বরঘাট গ্রামের মরিচ চাষি ইয়াছিন আলী ও আলতাফ হোসেন জানান, একবিঘা জমিতে মরিচ চাষে সব মিলিয়ে তাদের ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা এবং বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে পাঁচ মণ। পাইকারি বাজারে যা বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয় হাজার টাকা মণ।
সারিয়াকান্দী উপজেলার কাজলা গ্রামের মরিচ চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন তিনি। সার, বীজ, শ্রমিকসহ সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি তার উৎপাদন খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। গড়ে প্রতি বিঘায় তার সাড়ে পাঁচ মণ করে শুকনো মরিচ উৎপাদন হয়েছে। প্রকার ভেদে শুকনো মরিচ সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
কৃষকরা বলেন, এখানকার মরিচের খ্যাতি থাকায় স্কয়ার, প্রাণ গ্রুপ, বিডি ফুড সহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের এজেন্টের মাধ্যমে মরিচ সংগ্রহ করেছে। সংগ্রহ করা এসব মরিচ প্রক্রিয়াজাত ও মসলা আকারে তৈরি করে দেশে ও বিদেশে রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এসএন/কেএইচ
** অল্প পুঁজি স্বল্প শ্রম, লাভ বেশি স্ট্রবেরিতে