ঢাকা: চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ব্যবসায়িক আস্থা বেড়েছে। বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্ট’র (বিল্ড) এর এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিভিন্ন খাতের ৪’শ জন ব্যবসায়ীর মতামত নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিল্ডের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীক আস্থা সূচক ছিল ৯ দশমিক ৭৪। এরপর জুলাই থেকে
ডিসেম্বর সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩৫।
তাছাড়া বিল্ড ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চেয়েছিল চলতি বছর অর্থ্যাৎ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিনিয়োগের অবস্থা কী হবে।
ব্যবসায়ীদের কথা মতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবার ঊর্দ্ধমুখী হয়েছে এই আস্থা সূচক।
জানুয়ারি থেকে জুলাই সময়ে এই আস্থা সূচক ৯ দশমিক ৩৭ হবে বলে বিল্ড মনে করছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে ‘বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে উঠে আসা তথ্য প্রকাশ করেন বিল্ডের গবেষক সাইফুল হক।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় তিনি বলেন, শেষ দশকে দেশে বিনিয়োগ পর্যপ্ত পরিমাণে বেড়েছে। বাজেটের আকারও বেড়েছে বেশ। রাজস্ব আয়, রফতানি আয়ও অনেক বেড়েছে। এ থেকে বোঝা যায় দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন খাতের ৪০০ জন ব্যবসায়ীর মতামতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা বিল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের দ্বিতীয় অর্ধে ৪৭ শতাংশ ব্যবসায়ী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন। এদের মধ্যে ২৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেন।
এদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ বড় ব্যবসায়ীদের ২০১৪ সালের প্রথম অর্ধে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন। যাদের ৪১ শতাংশ বিনিয়োগ করেন।
মধ্যম ব্যবসায়ীদের ৫৬ শতাংশ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন এবং বিনিয়োগ করেন ৩৩ শতাংশ। ছোট ব্যবসায়ীদের ৪০ শতাংশ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন। যাদের ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করেন।
উৎপাদন খাতের ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন এবং বিনিয়োগ করেন ২৮ শতাংশ। আর সেবা খাতে ৪৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেন। যাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করে পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দেন বলে বিল্ডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিল্ড বলছে, ব্যবসাকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে হবে। এছাড়া বিদ্যুতের খরচ, পরিবহন খরচ, পরিবহন ব্যবস্থা, দুর্নীতি, সুদের হার, জ্বালানী খরচ, মুনাফার কর হার ব্যবসায়ীদের অনুকুলে থাকতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে বিনিয়োগ ৫টি কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণগুলোর মধ্যে হলো- প্রফিট মার্জিন ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, ব্যবসার সুযোগ ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, কৃষি পণ্যের চাহিদা ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি, পণ্যের বাজার চাহিদায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি ও ৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ অর্থের ব্যবস্থা।
বিল্ড বলছে, বিবিএস’র হিসাব মতে ২০১৪ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৯ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যে আয়ের দেশে যেতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০ শতাংশ করতে হলে এ বিনিয়োগ পরিস্থিতি ৩২ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে।
বিল্ডের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ চক্রবর্তী, ডিসিসিআই’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সহ-সভাপতি মো. শোয়েব চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম বলেন, খরচ বাড়লে নানা কথা হয়। বাস্তবত হলো এটি কোন চিন্তার বিষয় না। কারণ খরচ বাড়লে ব্যবসায়িকভাবে কেউ না কেউ লাভবান হয়। তবে দুর্নীতি ও অবকাঠামো আমাদের চিন্তার বিষয়। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা আসায় অবকাঠমোর উন্নয়ন হচ্ছে।
সুদের হারের বিষয় তিনি বলেন, সুদের হার কমছে। আরও কমবে। আগামী জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমবে বলে আশা করছি। অর্থমন্ত্রী তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাবের সমালোচনা করে আবুল কাশেম বলেন, ভ্যাট কমলে সরকার কি ভাবে চলবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে হয়তো ভ্যাট সমন্বয় করা যেতে পারে। আর ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে যে ভ্যাট দিচ্ছে তা সরকার পর্যন্ত যাচ্ছে কি না তাও দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এএসএস/কেজেড