ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিম ট্যাক্স প্রত্যাহার দাবি অ্যামটব’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
সিম ট্যাক্স প্রত্যাহার দাবি অ্যামটব’র ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা: আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিমের ওপর নির্ধারিত ৩০০ টাকা কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)।

সংগঠনটি বলেছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সিমের ওপর এই কর নেই।

আসন্ন বাজেটে এ কর প্রত্যাহার না হলে তাদের পক্ষে বর্তমান দরে সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জ  হয়ে দাঁড়াবে।

সোমবার(২৭ এপ্রিল’২০১৫) বিকেলে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন নিয়ে প্রাক বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানান তারা।

এনবিআরের শুল্কনীতির সদস্য ফরিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় সংগঠনের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির ও  বিভিন্ন অপারেটরদের প্রতিনিধি এবং এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় এমটর’র বাজেট প্রস্তাব পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন মোবাইল অপারেটর রবি’র অ্যাজিয়াটা লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার(সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমদ।

প্রস্তাবে মাহতাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বিপরীতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ২ লাখ ৬৮ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোন ৪২ শতাংশ, বাংলালিংক ২৬ শতাংশ, রবি ২২ শতাংশ, এয়ারটেল ৬ শতাংশ, টেলিটক ৩ শতাংশ ও সিটিসেল ১ শতাংশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় জনসংখ্যা বেশি হলেও মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রবৃদ্ধি কম। সিমের দাম কম হলে গ্রামীণ জনপদের মানুষকে সহজে এর অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এ বিষয়টি বিবেচনা করে প্রতিটি সিম ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করে মোবাইল ফোন অপারেটররা। তবে প্রতিটি সিম বিক্রিতে সরকারকে ৩০০ টাকা কর দেওয়ায় লোকসান গুণতে হয় অপারেটরদের।

তিনি বলেন, বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকদের প্রত্যেককে একটি সিম ও রিম কার্ডের বিপরীতে ১০৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ টাকা মূল্য সংযোজন কর এবং ১৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। যার কারণে একটি সিম কার্ডের মূল্যে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা কর আরোপিত হয়। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সিমের ওপর এই কর নেই। দেশের সাধারণ মানুষ ও কোম্পানিগুলোর লোকসানের কথা বিবেচনা করে এ কর প্রত্যাহার করা দরকার।

মাহতাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে কর্পোরেট কর পদ্ধতিটি অদ্ভুত। তামাকজাত দ্রব্য সুপার প্রফিট ও ক্ষতিকর হওয়ায় তার ওপর ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট কর নির্ধারিত। আর মোবাইল ফোন সমাজের উপকারী ও প্রয়োজনীয় বস্তু হওয়ার পরও এর ওপর একই হারে কর্পোরেট কর দিতে হয়।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের ক্ষেত্রে কর্পোরেট কমানো জরুরি উল্লেখ করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কর্পোরেট করের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, এশিয়ার সকল দেশেই ৪০ শতাংশের নিচে এ কর নির্ধারিত থাকলেও বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর্পোরেট কর দিতে হয়।

বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ৩৫ শতাংশ, ভারতে ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াতে ২৫ শতাংশ হারে এ কর দিতে হয়। আর বাংলাদেশ পার্শ্ববতী দেশ হওয়ার পরও অসহনীয় মাত্রায় কর্পোরেট কর দিতে হয়। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে কষ্ট হয় বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করা অপারেটরদের। তাই সব দিক বিবেচনা করে এ করের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও তালিকা বর্হিভূত কোম্পানির ৩৫ শতাংশ করা দরকার।

অ্যামটবের মহাসচিব নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভুত সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ কর দিতে হয় মোবাইল ফোন অপারেটরদের। মোবাইল অপারেটররা অন্যান্য কোম্পানির মতো হলেও তাদের কাছ থেকে এ কর ৩৭ শতাংশ না নিয়ে ৪৫ শতাংশ নেওয়া হয়। এটা এক ধরনের বৈষম্য।

কর্পোরেট করসহ অন্যান্য করের হার বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশি কোম্পানিগুলো ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি ছাড়া বাকী কোম্পানিগুলো লোকসানে থাকায় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে শেয়ার থাকা আন্তর্জাতিক টেলিকম গ্রুপগুলো। এরমধ্যে সিটিসেল থেকে সিংটেল, রবি থেকে টিটিআই ডোকোমো ও এয়ারটেল থেকে ওয়ারিদ টেলিকম।

আলোচনায় বিভিন্ন অপারেটরদের প্রতিনিধিরাও আসন্ন বাজেটে সিমের ওপর কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
এডিএ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।