ঢাকা: সুপারশপগুলোতে কেনাকাটা করেন নাজমা রহমান। এতে সুবিধা হলো এক সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পণ্য এক জায়গায় পান।
ঢাকার ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা নাজমা রহমান একজন গৃহিণী। ধানমন্ডির আগোরা থেকে বিকাশ’র মাধ্যমে কেনাকাটা করছিলেন। এ সময় কথা হলো তার সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী চাকরি সূত্রে খুলনায় থাকেন। সংসার চালানোর জন্য তিনি মাসে-মাসে আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান। আগে আমাকে টাকা তুলতে কষ্ট করে ব্যাংকে যেতে হত। কিন্তু এখন আমি সরাসরি আমার অ্যাকাউন্টে টাকাটা পেয়ে যাচ্ছি। এর ফলে আমার টাকা অতি সহজে এবং মুহূর্তেই পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নিত্য দিনের কেনাকাটাও করা যায় বিকাশ ব্যবহার করে। এতে আমার উপকার দুইদিক থেকেই। নগদ অর্থ সঙ্গে রাখতে হচ্ছে না পাশাপাশি নিজের বিকাশ ব্যবহার করেই যে কোনো পণ্য কিনতে পারছি। শুধু তাই নয়; নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে দিয়ে আমি আমার মোবাইল ফোনের ব্যালেন্সও রিচার্জ (বাই এয়ারটাইম সুবিধা) করে থাকি।
‘শুধু আগোরা নয়, আড়ং, সুপারশপ স্বপ্ন, মীনাবাজারের আওউটলেটগুলতে বিকাশ’র মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করছি। যা একটি বিরাট সুবিধা’- বলেন নাজমা রহমান। তিনি আরও বলেন, শুধু আমি কেন যাদের বিকাশ ওয়ালেট আছে তারা বিকাশ দিয়ে কনাকাটায় অভ্যস্ত হলেই এসব সুবিধা উপলব্ধি করতে পারবেন।
বিকাশ দিয়ে কেনাকাটা ছাড়াও হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ইন্টারনেটের বিল পরিশোধের পাশাপাশি, ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া দেওয়া এমনকি প্লেনের টিকিটও কেনা যাচ্ছে। বিকাশ দিয়ে ৫,০০০ হাজারেরও বেশি দোকান এবং প্রতিষ্ঠানে মূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন। বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ছোটখাটো কাঁচামাল সরবরাহ করেন। তার সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হচ্ছিল। তিনি একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। বলেন, আমি অবাকই হলাম দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্যাক্সি ভাড়া পরিশোধ করা যাচ্ছে। জিয়া উদ্দিন জানান, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ধানমন্ডি-১৫ নম্বর এসেছেন তমা ট্যাক্সিতে করে। যখন ট্যাক্সিতে উঠে বিকাশের মার্চেন্ট ওয়ালেট নম্বরটি পান তখন আর নগদ টাকায় ভাড়া দিলেন না। পকেট থেকে ফোনটি বের করে বিকাশ ওয়ালেটের মাধ্যমে তমা ট্যাক্সির ভাড়া পরিশোধ করে দিলেন।
ঢাকা শহরে বর্তমানে তমার ২০০টির অধিক ট্যাক্সি চলাচল করছে। প্রতিটি ট্যাক্সিতে বিকাশের একটি করে মার্চেন্ট ওয়ালেট নম্বর দেওয়া আছে। যেখানে একজন বিকাশ ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে ওই নম্বরে পেমেন্ট করতে পারেন।
তিনি বলেন, আমি আমার ব্যবসায়ীক কাজে বিকাশ দিয়ে বিভিন্ন সময় লেনদেন করি। পোশাক কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ করি, সেখান থেকে বিকাশে আমাকে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিকাশ ব্যবহার করে আমার লেনদেনের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় সেবা ব্যবহার করতে পেরে বেশ উপকৃত।
মোবাইলে বাই এয়ারটাইম সেবা ব্যবহার করছেন রফিকুল ইসলাম। শুধু তিনি নিজেই নন, তার পরিবারের সবাইকে তিনি বিকাশের বাই এয়ারটাইমের মাধ্যমে মোবাইলের ব্যালেন্স রিচার্জ করে দেন। প্রয়োজনে যে কোনো সময় তিনি মোবাইলে কথা বলার জন্য ব্যালেন্স রিচার্জ করতে পারছেন যা একটি অতি উপকারী সেবা বলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি আরও বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। আমার বড় মেয়ে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ছোট ছেলে এইচএসসি (উচ্চ মাধ্যমিক) পড়ছে। দুই সন্তান ও স্ত্রী এবং আমি নিজে মোবাইলে ব্যালেন্স রিচার্জ করছি বিকাশের বাই এয়ারটাইম সেবার মাধ্যমে। এতে দিন রাতের কোনো বালাই নেই, যে কোনো সময়ে মোবাইলে প্রয়োজনীয় অংকের টাকা রিচার্জ করে নিতে পারছি কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
বিকাশ’র বাই এয়ারটাইম সেবা ব্যবহার করে নিজের মোবাইল ছাড়াও অন্যের নম্বরে ব্যালেন্স রিচার্জ করে দেওয়া যায়। বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহারকারীরা বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল নম্বরে মোবাইল ব্যালান্স টপ-আপ করতে পারবেন।
বিকাশ ওয়ালেট ব্যবহারকারীরা তাদের ওয়ালেট থেকে নিজের অথবা অন্য যেকোনো গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও এয়ারটেলের প্রি-পেইড ও পোস্ট-পেইড নম্বরে এবং রবির প্রি-পেইড নম্বরে টপ-আপের মাধ্যমে টাকা রিচার্জ করতে পারছেন।
এ প্রসঙ্গে বিকাশ’র হেড অব মার্কেটিং আসিফ আহমেদ বলেন, বিকাশ দিয়ে টাকা আদান-প্রদানের বাইরেও অনেক কিছু করা যাচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসা বিল, প্লেনের টিকেট কেনাসহ বিকাশ দিয়ে এখন মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ, জমানো টাকার ওপর সুদ পাওয়া, কর্মীদের বেতন দেওয়ার মতো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। একজন মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক ইকো-সিস্টেমে বিকাশ রয়েছে প্রয়োজনে পাশে।
বাংলাদেশে অতি স্বল্প সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যে বিস্তৃতি ঘটেছে এটিকে দেশিয় অর্থনীতির একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশের বঞ্চিত জনগোষ্ঠী এখন খুব সহজ ও নিরাপদে টাকা আদান-প্রদানসহ নানারকম কাজ করতে পারছে।
এমনই একজন পোশাক শ্রমিক শফিউল ইসলাম। তার ভাই গ্রামের বাড়ি নোয়াখালির হাতিয়ায় থাকে, সেখানে তিনি অ্যাকসিডেন্ট করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে টাকা দরকার। ফোন এলো শফিউল ইসলামের কাছে। তিনি তখন কারখানায়। তাতে কী। সঙ্গে ছিল বিকাশ ওয়ালেট। ওয়ালেটে থাকা হাজার দুই টাকা দ্রুতই পাঠিয়ে দিলেন গ্রামের বাড়ি হাতিয়ায়। মুহূর্তের মধ্যেই সে টাকা চলে গেলো ভাইয়ের কাছে।
দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ২০১৫’র শুরুতে আড়াই কোটি পার করেছে। ২০১৪’র নভেম্বর শেষে এর গ্রাহক ছিল দুই কোটি ৩৩ লাখ। এর আগে সেপ্টেম্বরে গ্রাহক দুই কোটি ছুঁয়ে যায়। প্রতি মাসেই ক্রমশ বৃদ্ধির এ হারই বলে দিচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতি মানুষের ভরসা ও আস্থা দিন দিন কতখানি বাড়ছে। ফলে একই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন দেশে লেনদেন হচ্ছে ৩শ’ ৫০ কোটি টাকারও বেশি।
এ বিপুল সংখ্যক মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারী গ্রাহকদের একটি বিরাট অংশই বিকাশ’র। মূলত বিকাশের নানামাত্রিক সেবাই এটিকে মানুষের এতোটা কাছাকাছি নিতে পেরেছে। অর্জন করেছে সর্বস্তরের মানুষের গ্রহণযোগ্যতা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
আইএ