ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চাহিদা মেটাতে নতুন উদ্যোগ

বিদেশি ফলও দেশের মাটিতে উৎপাদন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৮ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৫
বিদেশি ফলও দেশের মাটিতে উৎপাদন ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সারাদেশের চাহিদার যোগান দিতে বছরজুড়ে দেশীয় ফল উৎপাদনের পাশাপাশি স্থানীয় আবহাওয়ায় উৎপাদনযোগ্য বিদেশি ফল উৎপাদনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য দেশের ৪৫টি জেলায় ৬০টি হর্টিকালচার সেন্টারের আধুনিকায়ন এং ৯টি নতুন হর্টিকালচার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এছাড়া, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফলের প্রায় ৫০ লাখ মানসম্পন্ন চারা, কলম উৎপাদন ও বিতরণ করা হবে।

চাহিদা মেটাতে দেশি ও রফতানিযোগ্য ফল উৎপাদনে অধিক মনোযোগ দিয়ে এ উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ‘বছরব্যাপী ফল প্রাপ্তি ও পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের সাতটি বিভাগের ৪৫টি জেলার সবগুলো উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকা হলো ঢাকা বিভাগের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ; চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান; সিলেট বিভাগের সিলেট ও মৌলভীবাজার; রংপুর বিভাগের রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালী; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ; খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, খুলনা ও মেহেরপুর জেলা।
 
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সারাবছর  ৪৫টি জেলায় যেন দেশি ও বিদেশি ফল উৎপাদন করা যায় সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশি ও রফতানিযোগ্য ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি-নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ‍সাশ্রয় করা হবে। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পের কিছু কাজ কাটাছেঁড়া করতে হবে, কিছু কাজ সংযুক্তও করা হবে। যেন দেশবাসী সারা বছর ফল খেতে পারেন।
 
তিনি জানান, এ প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার বাণিজ্যিক বাগান প্রদর্শনী, ৩ হাজার মিশ্র ফল বাগান প্রদর্শনী, ৩ হাজার ড্রাগন ফলা বাগান প্রদর্শনী, ১৫ হাজার বসতবাড়ি প্রদর্শনী, ১০০টি সেচ প্রদর্শনী. ১০০টি জলাধার প্রদর্শনী ও দু‘টি ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মাণ করা হবে।
 
প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬৫ হাজার কৃষক, ৯০০ জন মালি, ৩০ হাজার গৃহিণী ও ৩০ হাজার স্কুলগামীকে পুষ্টি সচেতনতা ও আধুনিক উদ্যান ফসল বিষয়ক  প্রযুক্তি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
 
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। দেশি ফল স্বাদে, রসে, গন্ধে ও পুষ্টিতে অতুলনীয়। প্রতি বছর এদেশে দশমিক ৩৪৮ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে ৪ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন টন ফল উ‍ৎপাদিত হচ্ছে।
 
পুষ্টিবিদদের মতে, মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য একজন মানুষের দৈনিক ফল খাওয়া উচিত ২০০ গ্রাম। কিন্তু, বাস্তবে খাওয়া হচ্ছে ৭৮ গ্রাম, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর মূল কারণ চাহিদা ও যোগানের ব্যবধান।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর দশমিক ৬ থেকে দশমিক ৮ ভাগ হারে কৃষি জমি কমছে। নানা উদ্যোগের কারণে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও ফল উৎপাদনে এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো যায়নি। এজন্য পাহাড়ি, অসমতল, অব্যবহৃত জমি অথবা যেখানে খালি জায়গা আছে সেখানে ফলের গাছ রোপণ করা হবে। সব ধরনের ফলের পাশাপাশি দেশীয় আবহাওয়ার উপযোগী উৎপাদনযোগ্য বিদেশি ফলের উৎপাদনও বাড়ানো হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৯ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৫
এমআইএস/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।