ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা পৌনে ৩ লাখ টাকার সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৫
ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা পৌনে ৩ লাখ টাকার সুপারিশ

ঢাকা: আগামী অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সর্বোচ্চ সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)।

বাজেট যাতে ব্যবসা-বান্ধব ও শিল্প সহায়ক হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখে ডিসিসিআই বেশ কিছু সুপারিশসহ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছে।



মঙ্গলবার (০৫ মে) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয় সংগঠনটি।

ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটের আওতায় এই ক্ষতি যাতে কিছুটা হলেও পূরণ হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ মজুত রয়েছে। তারপরও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিনিয়োগ প্রতিকূল পরিবেশ থাকার কারণে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এছাড়া ব্যাংকের অতিরিক্ত সুদের কারণে ব্যবসায়িক খরচ বাড়ছে। এ অবস্থায় ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনাসহ বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
 
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কর প্রদানে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। এতে সঠিকভাবে ব্যাংক ঋণও পরিশোধ করা যায়নি। তাই ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর প্রদানে বিশেষ ছাড় দিতে হবে। এক্ষেত্রে ফিক্সড ভ্যাট প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ মওকুফের আহবান জানাচ্ছি।
 
এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বিভিন্ন বন্দরে পণ্য খালাস করতে অতিরিক্ত বিভিন্ন পোর্ট চার্জ, জরিমানার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ মওকুফের আহ্বানও জানানো হয়।

করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ লোককে করের বোঝা বহন করতে হয়। যার একটি অংশ হলো ব্যবসায়ী। তাছাড়া দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মাত্র ১৮ কোটি লোক আয়কর সনদ থাকলেও চলতি করবর্ষে মাত্র ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯১৩টি ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতা তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। তাই করের হার বৃদ্ধির চেয়ে আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

করপোরেট কর পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়ে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ‘মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে করপোরেট কর ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পোনির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং ব্রোকারেজ অপারেটরদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এজন্য ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব, একই সঙ্গে নারী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এ দিকে নিট সম্পদের ওপর সারচার্জ শিথিল করার প্রস্তাব জানিয়ে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে নিট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি টাকার স্থলে ৪ কোটি পর্য্ন্ত সারচার্জ শূন্য করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এছাড়া শুধু ভিআইপিদের ট্যাক্স কার্ড না দিয়ে সব করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড দেওয়া, চেম্বার ও ট্রেড বডির ওপর কর প্রত্যাহার, দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় চূড়ান্ত পণ্যের ‍ওপর কর বাড়িয়ে কাচাঁমাল আমদানিতে বিশেষ ছাড় ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।

কালো টাকার উৎস বন্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে ডিসিসিআই প্রস্তুত রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন বক্তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের সদস্য, প্রথম সচিব ও ডিসিসিআই নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৫
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।