ঢাকা: দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে যে ৪০লাখ পোশাকশ্রমিক তারাই অবহেলিত থাকে প্রতি বাজেটে। নানা দাবির পরও ১৫ বছরে শ্রমিকদের জন্য কোনো বিশেষ বরাদ্দ নেই বাজেটে।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, দেশের পোশাকশিল্পের উন্নয়নে মালিকদের দাবিসমূহ বরাবরই পাস করা হয় বাজেটে। অথচ শ্রমিকরা থেকে যায় অবহেলিত। পোশাকশিল্পের প্রায় ৪০লাখ শ্রমিকের খেয়ে পরে বাঁচার ন্যূনতম অধিকারের জন্য রেশনিং ও বাসস্থান সুবিধা দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হচ্ছে গত ১৫ বছর ধরে। কিন্ত যে সরকারই আসুক না কেনো শ্রমিকদের এসব দাবি উপেক্ষিতই থেকে গেছে।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জন্য বহুদিন আগে থেকেই চালু আছে রেশনিং সুবিধা। বলা যায় অবিশ্বাস্য কম দামেই রেশন পান বিভিন্ন বাহিনীর এসব সদস্যরা। তাই নিজেদের জীবন পানি করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন যে পোশাক শ্রমিকরা তাদের জন্য রেশনিং সুবিধা চালু না করার পেছনে যুক্তি কী জানতে চান তিনি।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, দেশের রফতানি আয়ের ৮০শতাংশই হয় পোশাকশিল্প থেকে। কিন্তু এই খাতের শ্রমিকদের জন্য না আছে বরাদ্দ না আছে অন্য কোনো সুবিধা। আমরা এ বিষয়ে ২০০০ সালের শুরু থেকেই নানা দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। দেখা যায়, বাজেট পাস হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের বাসা ভাড়া, যানবাহন ভাড়াসহ নানা খরচ বেড়ে যায়। তারা পড়েন বিপাকে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাজেটে শ্রমিকদের জন্য কোনো বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়নি। অন্যদিকে শিল্পের মালিকপক্ষের জন্য উৎসে-কর কমানো হয়েছে কয়েক ধাপে। আগে যেখানে মালিকপক্ষকে উৎসে-কর দশমিক ৮ শতাংশ দিতে হতো এখন তা কমিয়ে দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে। তাদের ভবন নির্মাণের নানা সামগ্রীর আমদানি কর তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আছে নানা প্রণোদনা। অন্যদিকে দেশের পোশাকশিল্পের ৮০শতাংশ শ্রমিকই বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে।
নীতি নির্ধারক পর্যায়ে মালিকদের ওঠাবসা ও ঘনিষ্টতাও বাজেটে শ্রমিকদের অবহেলিত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতারা।
সংগঠনটির নেতাদের সাথে এই প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তাদের সবারই অভিমত, গার্মেন্টস মালিকরা সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ে সহজেই পৌঁছে যান। তারা নিজেদের একপেশে দাবি আদায় করে নিতে গিয়ে শ্রমিকদের দাবিকে পদদলিত করেন। এটা তারা করেন নীতি নির্ধারক পর্যায়ে শ্রমিকদের দাবি আড়ালে রেখে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য।
এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে। তিনি অবশ্য মালিকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করেননি। তার দাবি, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকরাও চান বাজেটে শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হোক।
তিনি বলেন, বাজেট হওয়া উচিৎ সমতার। আর শ্রমিকদের ছাড়া এতো বড় শিল্প কখনোই চলতো না, টিকে থাকতো না। তবে অনেক সীমাবদ্ধতা তো থাকেই। যেমন জায়গার সংকট। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ প্রকল্পের বেলায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস করে তা পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজতর করা উচিত। যাতে করে এসব জায়গা থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে ব্যবসায়ীরা বেসরকারিভাবে শ্রমিকদের আবাসন সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারেন। তাছাড়া শ্রমিকদের রেশনিং সুবিধার দাবিও যথেষ্ট যৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৫
ইউএম/এসইউ