ঢাকা: চলতি বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সারাদেশে টানা ৯০ দিনেরও বেশি সময় অবরোধ ডাকে। আর এ কারণে ফুটপাতের হকারদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় লাটে ওঠার যোগাড় হয়েছিল।
দেশের স্বাভাবিক এই পরিস্থিতিকে আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। আর তাই স্বাভাবিক সময়ের মতোই নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে যেতে চান তারা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হওয়া তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে রাজধানীর পল্টন, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ি এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
পল্টনের ফুটপাতে প্যান্ট বিক্রেতা মোহাম্মদ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, আগের চেয়ে ব্যবসা এখন অনেক ভালো। মিছা কমুনা, বেচাকিনা ভালোই হইতাছে। কিন্তু বছরের প্রথমদিকে যা শুরু হইছিল, দারুণ ভয় পাইয়া গেছিলাম। অহনও সেই ধকল কাটাইতে পারি নাই। হাজার হাজার ট্যাকা ঋণে আছি। তয় বেচাকিনাডা মোটামুটি ভালো হইতাছে। আর হেই কারণেই ঋণগুলা আস্তে আস্তে শোধ করতে পারতাছি।
ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, ব্যবসা করতে গেলে দোকানে মাল উডাইতে হয়। কিন্তু আমাগো তো ক্যাশ-ক্যাপিটাল নাই। মাল উডামু ক্যামনে। আবার ওইদিকে ডিসেম্বরে শীতের সিজনও আয়া পড়ছিল। হেই কারণে মাহাজনের কাছ থিকা ২০ হাজার, ১০ হাজার কইরা যেইসুম যা পারছি তাই লইয়া দোকানে মাল উডাইছি। কপাল এমনই খারাপ হেই সময়ই শুরু হইলো হরতাল অবরোধ। হরতাল-অবরোধে ব্যাচাকিনা একদম আছিল না। হেই সময়ই ঋণে পইড়া গেছিলাম। ক্যামনে যে দিনগুলান গেছে হেইডা আপনেরে বুঝাইতে পারুম না। বেচাকিনা না থাকলে মাহাজনরে ট্যাকা দিমু ক্যামনে আপনেই কন।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ আল্লাহ করতাছি যাতে কইরা ঈদের আগে আর কোনো ঝামেলা না হয়। কারণ এখন যেমনে চলতাছে এইডা আরো কয়েকটা মাস চললে আমরা একটু উইঠা খাড়া হইতে পারমু।
গুলিস্তানের হকার মোহাম্মদ মুন্না। রাস্তার পাশে বসে লুঙ্গি ও গামছা বিক্রি করেন তিনি। বেচাবিক্রি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, বেচাবিক্রি ভালোই হইতাছে।
হরতাল-অবরোধে যেখানে দুই হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতাম না। এখন প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মাল বিক্রি করতে পারতাছি। হরতাল-অবরোধ নাই এর চেয়ে শান্তি আর কী হইতে পারে!
আশা করতাছি ঈদের সময়ও দেশের পরিস্থিতি এইরকমই থাকবো। কারণ দেশের পরিস্থিতি যদি ভালা না থাকে তাইলে তো আমাগো মাথায় হাত। আমাগো চরম ক্ষতি হইয়া যায়। আমরা একদম পথে বইসা যাই। এখনতো কোনো ঝামেলা নাই। দেশের পরিস্থিতি যদি এই রকম থাকে তাইলে কয়ডা ডাইল-ভাত খাইয়া বাইচ্চা থাকতে পারি।
হরতাল-অবরোধে ক্ষতির বিষয়ে তিনি জানান, এখনও প্রায় ২০ হাজার টাকা ঋণে আছেন তিনি। তবে এখন বেচাবিক্রি আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে জানান তিনি।
এদিকে গুলিস্তানের আরেক ফুটপাত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে তিনি, হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাবিক্রি নিয়া যে বিপদে পড়ছিলাম এখন আর সেইডা নাই। এখন ভালোই চলতাছে। আগে মনে করেন সারাদিনে দুইডা জুতা বেচাই কঠিন ছিল। কিন্তু এখন মোটামুটি ভালোই হইতাছে। প্রতিদিন ২৫ থিকা ৩০ হাজার টেকার মাল বেচতাছি। আশা করতাছি বেচাকিনা আরো ভালো হইবো। কারণ দেশের পরিস্থিতি এখন ঠান্ডা।
এ সময় রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি ও জুরাইন এলাকার ফুটপাতে বসা বিভিন্ন হকারের সঙ্গেও কথা হয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা। সেইসঙ্গে দেশের এ স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৫
জেএম