ঢাকা: সবার ওপর ন্যূনতম কর (মিনিমাম ট্যাক্স) আরোপ করা হতে পারে এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
শনিবার(৯ মে) রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীর আলোকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ পরিকল্পনার কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, দেশের মাত্র ১.১ মিলিয়ন মানুষ কর দেয়। এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি অনেকদিন ধরে সবার উপর কর আরোপের চিন্তা করছি। সবাইকে ন্যূনতম কর দেওয়া উচিত।
পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সঞ্চলনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এমসিসিআই) সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের(সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান আনিস এ খান প্রমুখ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর উল্লেখ করেন, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পার আওতায় প্রতিবছর গড়ে ২.১ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে এ ব্যর্থতা বেশি।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে। এর মধ্যে রয়েছে ধুমপান সামগ্রীর উপর কর আরোপ, বেতন থেকে কর সংগ্রহ, কর প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়ানো, আরএমজি ও নিট রফতানিকারকদের কর হার বাড়ানো, সঠিক সম্পত্তি কর পদ্ধতি চালু, সকল ধরনের মূলধনী লাভের উপর কর আরোপ ও নতুন ভ্যাট আইনে যুক্তি সংগত সম্পূরক শুল্ক নীতিমালা।
বিড়ি ও নিম্নমানের সিগারেটে উপর উচ্চ কর আরোপের সুপারিশ করে পিআরআই’র এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ধুমপানের বাজার ৪৭ শতাংশই বিড়ির দখলে। অথচ রাজস্ব আয়ে বিড়ি ধুমপান খাতের মাত্র ২-৩ শতাংশ আবদান রাখছে। অপরদিকে ৬ বছরের ব্যবধানে নিম্নমানের সিগারেটের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে ৬৩ শতাংশ হয়েছে। বিড়ি ও নিম্নমানের সিগারেটের উপর উচ্চ কর আরোপ করলে একদিকে এই ক্ষতিকর দ্রব্যটি ব্যবহারে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
এ সুপারিশের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ধুমপান বিরোধী প্রচারণা চালানোর পরও বিশ্বে ধুমপান বন্ধ হচ্ছে না। জনসাধারণকে ধুমপানে নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সরকারি ৪টি ব্যাংক থেকে ট্রেজারি কাজের জন্য একটি ব্যাংক রেখে বাকি ৩টি ব্যাংক মার্জ করার বিষয়ে পিআরআই’র প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিভাবে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা যায় সেজন্য পিআরআইকে একটি গাইড লাইন তৈরির আহ্বানও জানাই।
এ সময় মোবাইলের উপর ট্যাক্স ব্যবস্থা ভালো নয় বলেন মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
এমসিসিআই’র সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, স্প্রেড(আমানত ও ঋণের সুদ হারের পার্থক্য) ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা ভালো খবর। তবে স্প্রেড ২ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। একই সঙ্গে সুদের হার কমানো উচিত।
তবে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ১৩ শতাংশ রেখে কোনভাবেই সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আগামী বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ।
আরএমজি খাতের কর বাড়াতে পিআরআই’র দেওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, করের ক্ষেত্রে গার্মেন্ট খাতকে যে ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা না দিয়ে কারখানা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দের মাধ্যমে এ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, ধুমপান সামগ্রীর উপর কর বাড়ালে বড় ধরনের রাজস্ব পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে গুড়া দুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৫/আপডেটেড- ১৭২০ ঘণ্টা
এএসএস/এনএস